নবীনা-প্রবীণা: ‘ফিরে দেখা জার্নি’-র ছয় সদস্য। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
না ছিল উৎসাহ, না ছিল ন্যূনতম সাজ-সরঞ্জাম। শুধু এক বুক সাহস আর অদম্য জেদে ভর করেই আজ থেকে অর্ধ শতক আগে ১৯ হাজার ৯০০ ফুট উচ্চতার রন্টি শৃঙ্গে পূর্ব ভারতের প্রথম মহিলা পর্বতারোহী দল হিসেবে জয়ের পতাকা উড়িয়েছিল আট বাঙালি মেয়ের দল। ‘পথিকৃৎ মহিলা পর্বতারোহণ সংস্থা’র ওই অভিযানের দলনেত্রী ছিলেন দীপালি সিংহ। সময় পেরিয়েছে। এক সময়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকা সেই ঐতিহাসিক অভিযানের গায়ে জমেছে সময়ের প্রলেপ।
কিন্তু, তাতে যে অভিযাত্রীদের প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়েনি, তার প্রমাণ রাখছেন তাঁরা নিজেই। দলের বেশির ভাগ সদস্যই আজ বেঁচে নেই। যে ক’জন রয়েছেন, প্রত্যেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার পরেও ওই দলেরই দুই প্রবীণা দীপালি সিংহ ও স্বপ্না মিত্র এবং তাঁদের আরও এক সঙ্গী বেণু বন্দ্যোপাধ্যায় রওনা দেবেন অভিযানে। সঙ্গী তিন তরুণী চিত্রশিল্পী পূজা, মীরা, পৌলমী। বুধবার বিকেলে প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠকে আসন্ন অভিযানের পতাকা হাতে তুলে নিলেন দীপালি দেবী। তবে অভিযান নয়, একে ‘জার্নি’ বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ তিনি। তাই ‘ফিরে দেখা জার্নি’ নামেই ২১ জুলাই শুরু হচ্ছে পাহাড়যাত্রা।
কলকাতা থেকে মানালি পৌঁছে, রোটাং পাস পেরিয়ে বাতাল যাবেন তাঁরা। সেখানেই রয়েছে ৬৭ সালের ওই অভিযাত্রী দলের সদস্য সুজয়া গুহর স্মৃতিফলক। ১৯৭১ সালে ওই এলাকায় একটি পাহাড়ি নালায় পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন সুজয়াদেবী। বাতালের স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অভিযাত্রী দলটি পৌঁছবে চন্দ্রতাল, চন্দ্র নদীর উৎসস্থল। তার পরে ১৫ হাজার ফুট উঁচু কুনজুম লা হয়ে ফেরার পথ ধরবেন তাঁরা। দুর্গমতার দিক থেকে এই যাত্রা তেমন কিছুই না হলেও, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাদের পক্ষে ওই উচ্চতায় হাঁটাহাঁটি করাও যথেষ্টই দুঃসাহসিক।
অবশ্য এই বৃদ্ধা শব্দটিতে তীব্র আপত্তি রয়েছে দীপালিদেবীদের। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘‘শরীরের বয়স বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু মনের দিক থেকে এখনও ৫০ বছর আগের উন্মাদনাই অনুভব করি। আমাদের মোটেই বুড়ো বলবেন না!’’ সত্যিই তো, বুড়ো হয়ে গেলে কি আর ৭১ বছর বয়সে, নকল হাঁটুর ভরসায়, ট্র্যাকস্যুট চাপিয়ে, জুতো বেঁধে, রুকস্যাক নিয়ে পাহা়ড়ি পথে পা বাড়ানোর সাহস করেন কেউ? একটুও কি ভয় নেই? বেণু বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ভয় কোনও দিনই ছিল না। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেশার, সুগারের মতো ভয়টা কিন্তু বাড়েনি।’’
১৯৬৭ সালে প্রথম রন্টি শৃঙ্গ ছোঁয়া ৬৯ বছরের স্বপ্না চৌধুরীর আবার পরিবারের সদস্যেরা তেমন ভরসা পাচ্ছেন না এত বড় যাত্রায়। স্বপ্না অবশ্য অদম্য। বললেন, ‘‘৫০ বছর আগেও বিরোধিতা পেয়েছিলাম। বহু নিষেধ উপেক্ষা করে শৃঙ্গ ছুঁয়েছিলাম। মানসিকতা এখনও একই আছে। আবারও সফল ভাবে শেষ করব এই যাত্রা।’’