‘মায়ের কাছে যাব’, কেঁদেই চলেছে মৃতার একরত্তি মেয়ে

ঘটনার আকস্মিকতায় একেবারে গুম মেরে গিয়েছে শিশুটি। কিছু ক্ষণ ভুলে থাকলেও পরক্ষণেই ‘মায়ের কাছে যাব’ বলে কান্না জুড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০২
Share:

আতঙ্কিত: পড়শির সঙ্গে সেই শিশু। বুধবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

পাঁচতলার ছাদ থেকে রাস্তায় পড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন মা। তীব্র যন্ত্রণায় কাতরালেও তিনি বুকের উপর থেকে কোনও ভাবেই নিজের হাত সরাচ্ছেন না। দুই হাতের ‘বেষ্টনী’র মধ্যে তিনি ধরে রেখেছেন নিজের একরত্তি সন্তানকে। মাকে জড়িয়ে ধরে যে সমানে কেঁদে চলেছে। মায়ের বুকে আঁকড়ে থাকাতেই প্রাণে বেঁচে গেল বড়তলা স্ট্রিটের বাসিন্দা, আড়াই বছরের যুবাকি মোহতা।

Advertisement

বুধবার ভরসন্ধ্যায় বড়তলা স্ট্রিটের একটি বাড়ির পাঁচতলার ছাদ থেকে প্রথমে তার মা ইন্দিরাকে পড়তে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নীচের একটি শেডে যখন ওই তরুণী ধাক্কা খান, তখনই দেখা যায়, তিনি বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন যুবাকিকে। মায়ের মতো রাস্তায় আছড়ে না পড়লেও টিনের খোঁচায় আঙুল কেটে গিয়েছে ওই শিশুটির। তবে ঘটনার পর থেকে মাকে ছেড়ে থাকতে চাইছে না সে। গেঞ্জি ও নীল হাফপ্যান্ট পরা মেয়েটি সর্বক্ষণই মায়ের জন্য কেঁদে চলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী তথা স্থানীয় বাসিন্দা বিশাল সোনকার বলেন, ‘‘ইন্দিরা ও তাঁর মা সোহিনী কাপাড়িয়াকে উপর থেকে পড়তে দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। ওঁরা যখন নীচে আছড়ে পড়লেন, তখন দেখি, মেয়েটাকে বুকে চেপে ধরে রেখেছেন ইন্দিরা।’’ নীচে পড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই শিশুটিকে ইন্দিরার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন বিশালরা। প্রথমে রাস্তার পাশের একটি মিষ্টির দোকানে নিয়ে যাওয়া হয় যুবাকিকে। কিন্তু ক্রমশ ভিড় বাড়তে থাকায় স্থানীয় লোকজনই শিশুটিকে নিয়ে যান রাস্তার পাশের একটি নুনের গুদামের অফিসঘরে। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকতে নারাজ যুবাকি। তাকে ভুলিয়ে রাখতে শেষমেশ এক প্রতিবেশী মহিলাকে ডেকে আনা হলে তিনি কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেন তার। শিশুটির হাতে দেওয়া হয় বিস্কুট ও চকলেট।

Advertisement

আরও পড়ুন: বহুতল থেকে পড়ে মৃত মা, জখম মেয়ে ও নাতনি

ঘটনার আকস্মিকতায় একেবারে গুম মেরে গিয়েছে শিশুটি। কিছু ক্ষণ ভুলে থাকলেও পরক্ষণেই ‘মায়ের কাছে যাব’ বলে কান্না জুড়ছে। কখনও আবার দাদুর কাছে যাওয়ার বায়নাও ধরছে। ঘটনার পর থেকে দাদু চাঁদরতন কাপাড়িয়া বাড়ির চারতলার ঘরে হতভম্ব হয়ে বসে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনার সময়ে ওই বৃদ্ধ ঘরে একাই ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র অবসাদে ভুগছেন ওই বৃদ্ধ। সেই কারণে যুবাকিকে তাঁর কাছে না পাঠিয়ে গুদামঘরের অফিসেই তার জন্য বিছানা পেতেছেন স্থানীয় যুবক প্রকাশ মহাবর, গিরিরাজ পুরোহিতেরা। কেউ যাতে শিশুটিকে বিরক্ত করতে না পারেন, তার জন্য অফিসের শাটার বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ‘সঙ্গী’ কোকিলের ঠাঁই বদল নিয়ে চিন্তায় জেলখাটা কয়েদি

কিন্তু ছোট্ট শিশুটি বারবার মায়ের খোঁজ করায় শেষমেশ ঊর্বশী নামে এক মহিলাকে ডেকে আনেন পড়শিরা। ওই এলাকাতেই কচুরির দোকান ওই মহিলার। তাঁকে আন্টি বলেই ডাকে আড়াই বছরের যুবাকি। রাতে তিনি এসে ওই শিশুকে সামলানোর চেষ্টা করেন। তাঁকে দেখামাত্রই ‘আন্টি আন্টি’ বলে কেঁদে ওঠে যুবাকি। খবর পেয়ে ইন্দিরাদের আত্মীয়েরাও চলে আসেন শিশুটির কাছে। রাতে তার খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইন্দিরা ও তাঁর মা নীচে পড়ার পরেই তাঁদের ঘিরে ধরেন পথচলতি লোকজন। কিন্তু উদ্ধারের বদলে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন মোবাইলে ছবি তুলতে। শেষে জনতার ভিড় সরিয়ে স্থানীয়েরা উদ্ধারকাজে হাত লাগান। রাতে ওই এলাকার এক চিকিৎসককে নিয়ে এসে যুবাকিকে পরীক্ষাও করানো হয়। তার বাবা, পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী অমিত মোহতা যমুনালাল বজাজ স্ট্রিটের বাসিন্দা। চার বছর আগে তাঁর সঙ্গে ইন্দিরার বিয়ে হয়। সাংসারিক অশান্তির জেরে দেড় বছর ধরে কন্যাকে নিয়ে আলাদা থাকছিলেন ওই তরুণী। তাঁর এক ভাইও পক্ষাঘাতে আক্রান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন