রাস্তায় বসেই বিকিকিনি। মল্লিকঘাট ফুলবাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ফুল চাষিদের কপাল খুলল না!
বিশ বাঁও জলে কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারকে ঢেলে সাজার প্রকল্প। হাওড়ায় ফুল বাজারের জন্য আলাদা বাড়ি তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু তার দরজা খোলেনি। তাই কোথাও বন্দর, কোথাও রেল, কোথাও জাতীয় সড়কের জমিতে বসেই ব্যবসা করছেন ফুল চাষিরা। ব্যবসা করার ন্যূনতম পরিকাঠামোই পাচ্ছেন না তাঁরা।
ফুল উৎপাদনে দেশের মধ্যে তামিলনাড়ু আর কর্নাটকের পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু সেই ফুল বিক্রির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সাহায্য থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ফুল চাষিদের অনেকেরই অভিযোগ। ‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সংগঠন’-এর সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘ফুল উৎপাদনের পদ্ধতির পরিবর্তন, ফুল সংরক্ষণ ও ফুল ব্যবসার ন্যূনতম পরিকাঠামো আমরা বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছি। কিন্তু কোনওটাই হল না।’’ সংগঠনের এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘ফুল সংরক্ষণের তেমন কোনও সুবিধা না থাকায় আমরা তোলা ফুল সঙ্গে সঙ্গে বিক্রির দিকে তাকিয়ে বসে থাকি। কিন্তু ফুল বিক্রির তেমন পরিকাঠামো আমাদের দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’
মল্লিকঘাটের ফুলবাজারটি ২০০০ সালে রাজ্য সরকার বন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে ১ টাকায় ৯৯ বছরের লিজে নেয়। ঠিক হয় সেখানে ফুল সংরক্ষণ এবং ব্যবসার যাবতীয় পরিকাঠামো থাকবে। কিন্তু ১৬ বছরেও প্রকল্পটি দানা বাঁধতে পারেনি। ফুল চাষিরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন ৭ টাকা করে ও মল্লিকঘাটের ২৪৪ জন স্টলমালিক প্রতি বর্গফুটে ১০৪ টাকা করে মাসিক হারে ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছেন। ফুল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিকাঠামো না থাকায় বেচাকেনা ঠিকমতো হয় না এই ফুলবাজারে। তার উপরে প্রতিদিন অজস্র ফুল নষ্ট হয় শুধুমাত্র সংরক্ষণের অভাবে।
কলকাতার মল্লিকঘাটের যখন এই অবস্থা, তখন হুগলি নদীর অন্য দিকে হাওড়ার ফুল ব্যবসার পরিকাঠামোর ছবি আরও হতাশাজনক। চাষিরা জানান, সেখানে হাওড়া স্টেশনের কাছে উদ্যান বিভাগ ও কৃষি বিপনণ দফতরের যৌথ উদ্যোগে বছর তিনেক আগে একটি ফুল বাজার তৈরির জন্য বাড়ি করা হয়েছিল। কিন্তু স্টেশন থেকে মাত্র একটি ২৫০ মিটার রাস্তা এ পর্যন্ত তৈরি না হওয়ায় আজ পর্যন্ত বাজারটি চালু হতেই পারেনি। তাই হাওড়ার ফুলচাষিরা হয় দুই মেদিনীপুর কিংবা কলকাতায় গিয়ে ব্যবসা করেন।
হাওড়ায় গোলাপ, জবা, দোপাটি-সহ বিভিন্ন মরসুমি ফুলের ভাল চাষ হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, দেউলিয়ায় বেল, জুঁই, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরার চাষ হয়। সেই ফুল কলকাতা বা হাওড়ায় নিয়ে এসে বিক্রির পরিকাঠামো না থাকায় কোলাঘাটে রেলের জমিতে বসেই ব্যবসা করতে হয় ফুল চাষিদের। এ জন্য চাষিদের প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে রেল দফতরকে ভাড়াও দিতে হয়। দেউলিয়ায় ফুল বিক্রি করতে হয় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের জায়গার উপরেই। ফুলের কোনও বাজার পশ্চিম মেদিনীপুরেও নেই বলেই জানান চাষিরা।
নদিয়ার ফুল চাষি প্রবীর দে জানান, কৃষ্ণনগর, বীরনগর, বাদকুল্লায় গাঁদা, রজনীগন্ধা, দোপাটি, অপরাজিতার চাষ হয়। তিনি বলেন, ‘‘ফুলের চাষ আজও বিজ্ঞানসম্মত করার কোনও চেষ্টা হয়নি। তাই আমরা কর্নাটক ও তামিলনাড়কে ছাপিয়ে যেতে পারছি না। এ নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা হচ্ছে না। মাথার উপরে ছাউনি দেওয়া নূন্যতম একটা বাজারও আমাদের জন্য নেই।’’
সমস্যার সমাধানে রাজ্যের হর্টিকালচার মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার কাছে সম্প্রতি ১০০ দফার দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন ফুল চাষিরা। মল্লিকঘাট ফুলবাজার ঢেলে সাজার পরিকল্পনা রেজ্জাক সাহেবেরই। যদিও এই মুহূর্তে মল্লিকঘাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষ আশাবাদী নন মন্ত্রী নিজেও। তিনি বলেন, ‘‘ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে যত টাকার প্রয়োজন, তা সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’’ এমনকী, মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান
তথা তৃণমূলের বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার কথায়, ‘‘হর্টিকালচার বিভাগের কাছ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের আট কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তা কমাতে রাজি নন। ফলে মল্লিকঘাট ফুলবাজারের আধুনিকীকরণের প্রকল্প অনিশ্চিত।’’