গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিল সেচ দফতর। ফি বছরের মতো গত বর্ষাতেও উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে ভোগান্তি হয়েছিল বাসিন্দাদের। এলাকার জমা জল সরাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল সেচ ও পুর কর্তাদের। তাই এ বার ওই সমস্ত এলাকার নিকাশির উন্নয়নে প্রাক বর্ষা মোকাবিলার ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন সেচ কর্তারা।
সেচ কর্তাদের দাবি, আগাম ব্যবস্থা নিয়ে রাখার ফলে এ বারে আর জলবন্দি হতে হবে না উত্তর শহরতলির বাসিন্দাদের। তবে বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘সেচ দফতরের আগাম ব্যবস্থা বর্ষার সময় কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’’ সম্প্রতি জলসম্পদ ভবনে রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু, বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, কামারহাটির চেয়ারম্যান গোপাল সাহা সহ অন্যান্য পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকে উত্তর শহরতলির বাঙুর, লেকটাউন, রাজারহাট-গোপালপুর, জ্যাংরা, হাতিয়ারা, বরাহনগর, কামারহাটি, খড়দহ, পানিহাটি, বারাসত, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম সহ আরও কয়েকটি এলাকাকে ‘জল জমার’ জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বর্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় দিনের পর দিন জল জমে ছিল। কার্যত ঘর বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছিল বাসিন্দাদের।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, বাঙুর, লেকটাউন, জ্যাংরা, হাতিয়ারা, বরাহনগর, কামারহাটি, খড়দহ, রাজারহাট-গোপালপুর, পানিহাটি এই সমস্ত এলাকার নিকাশি মূলত বাগজোলা খালের উপর নির্ভরশীল। আবার বারাসত, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম-সহ কয়েকটি এলাকা নোয়াই খালের উপর নির্ভরশীল। সেচ কর্তারা জানান, গত বছরের বর্ষার পরেই মন্ত্রীর নির্দেশে এলাকাগুলি সমীক্ষা করে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে বাগজোলা ও নোয়াই খালের বেশ কিছু জায়গা আবর্জনায় বুজে গিয়েছে। কিছু এলাকা নিচু। বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকা। সেচ কর্তারা জানান, জল জমার খবর পেয়ে ওই সমস্ত এলাকায় পাম্প নিয়ে যেতেই অনেক সময় লেগে যেত। এ বারে তারই পরিবর্তন করা হচ্ছে। সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে বর্ষার আগে যে সমস্ত এলাকায় জল জমার সমস্যা রয়েছে, সেখানে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি এলাকার জন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সেচের সমন্বয়ের ঘাটতি হচ্ছিল। তার জন্য বৈঠক করে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
সেচ দফতরের উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বাস্তুকার (দক্ষিণ) গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানান, সমীক্ষায় উত্তর শহরতলির যে সমস্ত এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে প্রয়োজন মতো পাম্প ইতিমধ্যেই পাঠানো শুরু হয়েছে, যাতে জল জমার সঙ্গে সঙ্গেই পাম্প লাগিয়ে কাজ শুরু করা যায়। পাশাপাশি উত্তর শহরতলির অন্তর্গত প্রায় ৩৭ কিমি দীর্ঘ বাগজোলা ও ১৬ কিমি দীর্ঘ নোয়াই খালের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা কচুরিপানা, আবর্জনা তোলার কাজও শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও পলিও তোলার কাজও দ্রুতগতিতে করা হচ্ছে। আবার যে সমস্ত লকগেটগুলির বেহাল অবস্থা ছিল তাও বর্ষা শুরুর আগেই মেরামতি করে নির্দিষ্ট কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে জমা জল বের করা বা জল আটকানোর কাজে কোনও ঘাটতি না হয়। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘জুন থেকে অক্টোবর খালগুলিকে বাসিন্দারা নিকাশির অঙ্গ বলে মনে করেন। বাকি সময় ওই খালই তাঁদের কাছে ভ্যাট হয়ে যায়। সবাই সেখানেই আবর্জনা ফেলেন। তাই নাগরিক সচেতনাও বাড়াতে প্রচার করা হচ্ছে।’’
পাশাপাশি, বিভিন্ন পুরসভার সঙ্গে সেচের সমন্বয়ের অভাবেও সমস্যা বাড়ে বলে মনে করেন রাজীববাবু। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে সেচের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ না থাকলে কোন এলাকায় কী সমস্যা তা জানা যায় না। ফলে ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়।’’ এ জন্য সেচের আধিকারিকদের এলাকাগত ভাবে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে নিকাশির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।