‘নির্মল’ দত্তাবাদে শৌচালয় নেই মহিলাদেরই

বিধাননগর পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত দত্তাবাদ এলাকায় অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। অভিযোগ, সেই মহিলাদেরই একাংশ নিজেদের আব্রু রক্ষা করতে পারছেন না।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

প্রকাশ্যে শৌচকর্মের স্থান। দত্তাবাদে। নিজস্ব চিত্র

কোনও গ্রামে-গঞ্জে নয়। শহর কলকাতার একেবারে প্রাণকেন্দ্রেই অধরা ‘নির্মল বাংলা’।

Advertisement

বিধাননগর পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত দত্তাবাদ এলাকায় অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। অভিযোগ, সেই মহিলাদেরই একাংশ নিজেদের আব্রু রক্ষা করতে পারছেন না। সরকারি প্রকল্প থাকলেও পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের অভাবে কী ভাবে লজ্জার সঙ্গে আপস করে বড় হতে হয়, সেই পাঠ নিচ্ছে শিশুকন্যারাও। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংলগ্ন বিলাসবহুল হোটেলের উল্টো দিকের গলিটাই দত্তাবাদের অন্যতম প্রবেশপথ। সেই রাস্তা ধরে কিছুটা হাঁটলেই পুকুরের ধারে ইট দিয়ে ঘেরা দু’টি শৌচালয়। মহিলারা জানালেন, শৌচালয়ের মাথায় কোনও ছাদ বা ছাউনি না থাকায় বৃষ্টির সময়ে ছাতা মাথায় সেখানে বসতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ঊর্মিলা মণ্ডল বললেন, ‘‘শৌচালয়ের কল দিয়ে সরু ফিতের মতো জল পড়ে। নোংরা যেতে চায় না। এক-এক সময়ে গা গুলিয়ে ওঠে। শৌচালয়ে যাওয়ার খুব প্রয়োজন হলেও চেপে থাকি।’’ ন’বছরের শিশু রিক্তা বধূর মা চন্দনা বধূ বলেন, ‘‘আমরা বড়রা তবু কষ্ট করে শৌচালয়ে যেতে পারি। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে মেয়েদের পাঠাতে পারি না। নিরুপায় হয়ে পুকুরপাড়ে শৌচ করতে বলি। মেয়েরা তো বড় হচ্ছে। ওরা লজ্জায় প্রকাশ্যে বসতে চায় না।’’ গৃহবধূ সোমা সাহু বলেন, ‘‘কলের চাতালে ছেলেরা স্নান করে। তাদের সামনেই শৌচ করতে বসতে হয়। লজ্জা করলেও কিছু করার নেই। প্রস্রাব চেপে রাখব কী করে! ওখানে যদি একটু আড়ালও করে দিত।’’

একে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল শৌচালয়। তার উপরে অপরিচ্ছন্নতা। এর জন্য বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন বাসিন্দারা। আনন্দপুর এবং বাগপাড়ায় পুরসভার দু’টি গণ শৌচাগার ছাড়া আর কোথাও বর্জ্য যাওয়ার জন্য যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিতে শৌচালয়ের নোংরা সরাসরি গিয়ে মিশছে পুকুরে! স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এর চেয়ে খোলা আকাশের নীচে মলমূত্র ত্যাগ করা ভাল।’’

Advertisement

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মল দত্ত বলেন, ‘‘দেড় বছর আগে নির্মল বাংলা প্রকল্পে দত্তাবাদের জন্য হাজারের বেশি শৌচালয় নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল। সেই মতো শৌচালয় চেয়ে বাসিন্দাদের অনেকে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু ২০০টি শৌচালয় নির্মাণের পরে কাজ থমকে রয়েছে। এর কী কারণ, বলতে পারব না।’’ অপ্রতুল নিকাশি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে নির্মল বলেন, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা গড়া যে প্রয়োজন, তা পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির কাজ আপাতত আর্থিক জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া, সবার জন্য গৃহ প্রকল্পে শৌচালয় তৈরি হওয়ায় নির্মল বাংলা প্রকল্পে প্রস্তাবিত শৌচাগার তৈরির সংখ্যা সংশোধিত হয়েছে বলেও খবর। নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচালয় নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়ে পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা (জঞ্জাল সাফাই) বলেন, ‘‘দত্তাবাদে নিকাশি ব্যবস্থা কী ভাবে গড়া হবে? কোনও পরিকল্পনাই তো নেই। শৌচালয় যে হবে, তার জায়গা আছে! ইচ্ছে মতো যত্রতত্র ভাড়াটে বসানো হচ্ছে। এত ভাড়াটে কারা বসাচ্ছে? পরিষেবায় কোনও খামতি নেই। কিন্তু শৌচালয়গুলি যে নোংরা, তার জন্য বাসিন্দাদের মনোভাবও দায়ী। ঠিক মতো শৌচালয়গুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।’’ যদিও নির্মল বাংলা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত জেলা স্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সমস্যা যা-ই থাক, সকলে মিলে তার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে। সেটাই কাম্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন