Tenant

ভাড়াটের খবর গোপন করার প্রবণতায় ঝুঁকি

পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে থেকেই বহিরাগতদের সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করার কাজ চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৭:০৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

আবাসনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে লুকিয়ে থাকা পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ের ঘটনার পরে এখনও আতঙ্কে ভুগছেন নিউ টাউনের ‘সুখবৃষ্টি’র বাসিন্দারা। তবে শুধু তাঁরাই নন। দমদম থেকে সল্টলেক— ওই ঘটনার রেশ ছড়িয়েছে শহরের অন্যত্রও। কিন্তু ভাড়াটের খবর প্রশাসনের কাছে লুকনোর প্রবণতায় প্রশ্নের মুখে পড়ছে নিরাপত্তার বিষয়টিই।

Advertisement

কোথাও এলাকায় আসা বহিরাগতদের সম্পর্কে অন্ধকারে থাকে ব্লক কমিটি। কোথাও আবার ভাড়াটের খবর প্রশাসনকে জানাতে অনীহা থাকে খোদ ফ্ল্যাট-মালিক বা বাড়ির মালিকদেরই। দক্ষিণ দমদম এবং সল্টলেক পুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আবাসনে আসা বহিরাগতদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য জানা থাকে না। কোথাও ফ্ল্যাটে তৈরি হয়েছে মেস। কোথাও আবার পেইং গেস্ট বা ভাড়াটে হিসেবে কোন পরিবার থাকছে, সেই তথ্য জানেন না আবাসনের বাকি বাসিন্দারা। তাই প্রশাসনের কাছে ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক করার দাবি তুলছেন তাঁরা।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রশাসক জানিয়েছেন, বোর্ডের আগামী বৈঠকে নিরাপত্তাজনিত এই বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে। কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা হবে।

Advertisement

দক্ষিণ দমদম পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আবাসনের নিরাপত্তাজনিত এই সমস্যা বহু দিনের। পুর এলাকায় এ নিয়ে বহু ঘটনা আগে ঘটেছে। কিন্তু সমস্যা হল, বাড়ি ভাড়া দেওয়া হলেও প্রশাসনকে সে ব্যাপারে খবর না দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে নাগরিকদের একাংশের মধ্যে। এর আগে তাঁর নিজের ওয়ার্ডে রীতিমতো পোস্টার লাগিয়ে, মাইকের মাধ্যমে বাসিন্দাদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে আবেদন করা হয়। মাত্র কয়েক জনই সেই তথ্য জমা দিয়েছিলেন। তাই নিউ টাউনের ঘটনার পরে মানুষকে সচেতন করতে ফের প্রচারে জোর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

একই সুর সল্টলেকের বাসিন্দাদের গলাতেও। অভিযোগ, সেখানকার আবাসনগুলিতে ভাড়াটে বা বহিরাগতদের সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। অথচ সেখানে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যাও বেশি। সল্টলেকবাসীর দাবি, সেখানে আগের তুলনায় পাড়া সংস্কৃতি বাড়লেও বহিরাগতদের তথ্য জানার ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে বেশির ভাগ ব্লক কমিটি বা প্রতিবেশীরা।

সল্টলেকের জিডি ব্লকের আবাসিক সমিতির কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু জানান, আবাসিক সমিতির তরফে তথ্য জানানোর অনুরোধ করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা শোনা হয় না। ফ্ল্যাটমালিকদের একাংশের অবশ্য দাবি, এ বিষয়ে আবাসিক সমিতির কিছু বলার থাকতে পারে না। কিন্তু নিউ টাউনের ঘটনার পরে নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠছেই। অনেকেই মনে করছেন, প্রশাসনের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সল্টলেকের ইই ব্লকের এক আবাসনের বাসিন্দা পার্থ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভাড়াটে সম্পর্কে প্রশাসনকে তথ্য জানানো উচিত। কিন্তু কেউ কেউ তা দিতে চান না। এ বিষয়ে সচেতনতা ও প্রচার করার প্রয়োজন রয়েছে।’’

বাসিন্দাদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, ভাড়াটে থাকলে সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে অনেকেই তাঁদের ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে ভাড়াটে রাখার কথা জানতে দিতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে তথ্য দিতে হবে, সেই ভয়ে ভাড়া নিতে রাজি হন না অনেকেই।

বিধাননগরের পুর প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, তথ্য গোপনের প্রবণতা রয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি এমনই যে, অনেক সময়ে পুরসভার আধিকারিকেরা বাড়ি বা ফ্ল্যাটে গেলে দাবি করা হয় যে, ভাড়াটে নয়, আত্মীয়েরা সেখানে বাস করছেন। তবুও পুরসভা তার সীমিত ক্ষমতার মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে থেকেই বহিরাগতদের সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করার কাজ চলছে। গেস্ট হাউস বা হোটেলে কারা রয়েছেন, সে ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হয়।

দু’টি পুরসভার আধিকারিকদের একাংশই মেনে নিয়েছেন, পুর এলাকায় কোন বাড়িতে ভাড়াটে রয়েছে সেই তথ্য রাখা এবং নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো এই মুহূর্তে তাঁদের নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন