Jadavpur University Student Death

লালবাজারে ২০টির বেশি প্রশ্নের মুখে যাদবপুরের রেজিস্ট্রার, কী জবাব দিয়ে এলেন স্নেহমঞ্জু বসু?

বুধবার বিকেল ৩টে নাগাদ স্নেহমঞ্জু এবং রজতকে তলব করা হয়েছিল লালবাজারে। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে স্নেহমঞ্জু লালবাজারে গেলেও হাজিরা দেননি ডিন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৩ ২০:৪৪
Share:

স্নেহমঞ্জু বসু। —ফাইল চিত্র।

ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বুধবার অন্তত সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং হস্টেল সংক্রান্ত বিষয়ে রেজিস্ট্রারকে ২০টিরও বেশি প্রশ্ন করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ওই সূত্রটির দাবি, বেশির ভাগ প্রশ্নেরই জবাব দিতে গিয়ে স্নেহমঞ্জু জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়ই সে সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন।

Advertisement

বুধবার বিকেল ৩টে নাগাদ স্নেহমঞ্জু এবং রজতকে তলব করা হয়েছিল লালবাজারে। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে স্নেহমঞ্জু লালবাজারে গেলেও হাজিরা দেননি ডিন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডিনের তরফে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের একাংশ তাঁকে ঘেরাও করে রেখেছেন বলেই তিনি বুধবার তলবে সাড়া দিতে পারলেন না। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ স্নেহমঞ্জু তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন। তিনি সেখানে প্রায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছিলেন।

তদন্তকারীদের ওই অংশের সূত্রেই জানা গিয়েছে, যাদবপুরের হস্টেলে কারা থাকতে পারবেন, কারা ঢুকতে পারবেন, অতিথি হয়ে থাকার অনুমতি কী ভাবে পাওয়া যায়— এই সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় রেজিস্ট্রারের কাছে। গত বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার হস্টেল সংক্রান্ত বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে প্রথম বর্ষের যে পড়ুয়ার মৃত্যুর হয়েছে, তিনি অতিথি হিসাবেই হস্টেলে থাকছিলেন। ওই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনায় যাঁদের নাম জড়়িয়েছে বা এখনও পর্যন্ত যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক। এখানে প্রশ্ন উঠেছে, প্রাক্তনী হয়ে যাওয়ার পরেও ‘জড়িত’রা কী ভাবে হস্টেলে থাকছিলেন? তদন্তকারীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় স্নেহমঞ্জুর কাছে। শুধু তা-ই নয়, বিনা অনুমতিতে কেউ হস্টেলে ঢুকলে তাঁর উপর নজরদারির কী ব্যবস্থা রয়েছে, কিছু ঘটে গেলে তার দায় কার— জানতে চাওয়া হয় তা-ও।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং হস্টেল— কোথাও সিসি ক্যামেরা আছে কি না, এ ব্যাপারেও স্নেহমঞ্জুর কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রার এ ব্যাপারে ডিনকে জিজ্ঞাসা করার জন্য বলেছেন বলে জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের ওই সূত্রে। প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেলে সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে একটা সময়ে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের একাংশের তীব্র আপত্তি ছিল। গত বুধবার পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনার পর নতুন করে আবার সেই দাবি উঠতে শুরু করেছে। যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন (জুটা) অবশ্য এখন নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল, বিভিন্ন গেটে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানাতে শুরু করেছে। তার প্রেক্ষিতে স্নেহমঞ্জু আগেই জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যাদবপুরকাণ্ডে ‘র‌্যাগিং’য়ের অভিযোগ তুলেছে মৃত পড়ুয়ার পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যান্টি র‌্যাগিং’ কমিটি থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে পড়ুয়ারা ‘হেনস্থার শিকার’ হচ্ছেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। পুলিশ সূত্রে খবর, স্নেহমঞ্জুকে ওই কমিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, এই কমিটি কী এবং কী ভাবে কাজ করে, কারা থাকেন কমিটিতে ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে র‌্যাগিং সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশিকা— দুটোই লঙ্ঘন করে প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার নিরাপত্তায় সম্পূর্ণ আপস করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। তারা জানিয়েছে, ২০০৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, র‌্যাগিং ঠেকাতে ছাত্রাবাসে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের আলাদা রাখতে হবে। এবং তা সম্ভব না হলে বজায় রাখতে হবে ওয়ার্ডেন, নিরাপত্তাকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের অনবরত নজরদারি। সেই নির্দেশ স্মরণ করিয়েই গত সোমবার যাদবপুর কর্তৃপক্ষকে শো-কজ় করেছে কমিশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন