ভরসন্ধ্যায় শহরের রাজপথে দুই তরুণ-তরুণীর উপরে ‘বিবেকের’ ভূমিকায় চড়াও হল এক মত্ত যুবক। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘দৃষ্টিকটু’ আচরণের অভিযোগ তুলে এবং নিজেকে পুলিশ হিসেবে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে শ্লীলতাহানি করল ও তরুণীর। বেধড়ক মারধর করল তাঁর সঙ্গী যুবককে। এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এল। থানা এফআইআর-ও নিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, তার নামটুকু পর্যন্ত অভিযোগকারীদের জানাতে চায়নি পুলিশ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ওই দুই তরুণ-তরুণী পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন।
কী ঘটেছিল সে দিন? ওই তরুণীর দাবি, বৃহস্পতিবার রাত সওয়া আটটা নাগাদ শ্যামবাজারের মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের উল্টো দিকের ফুটপাথে তিনি এবং তাঁর সঙ্গী এসে বসেন। একটু পরেই এক মত্ত যুবক এসে বলে, সে থানার লোক। ফুটপাথ থেকে উঠে যেতে হবে। ‘‘ওর গা থেকে ভকভক করে মদের গন্ধ বেরোচ্ছিল। আমরা বলি, ‘আপনি থানার লোক, তা হলে থানায় চলুন।’ বলে উঠে হাঁটতে শুরু করি। বেসামাল অবস্থায় পিছনে হাঁটতে হাঁটতে অকথ্য গালাগাল দিতে থাকে ওই যুবক। আপত্তিজনক ভাবে আমার গায়ে এসে পড়ে।’’— বললেন তরুণী। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গী বাধা দিতে গেলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেয় ওই মত্ত যুবক। তরুণের ঘাড়ে-মাথায় চোট লাগে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণ-তরুণীর বয়ান শুনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। রুজু হয়েছে মামলাও। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই তরুণ-তরুণীকে ‘দৃষ্টিকটু’ আচরণ করতে দেখে প্রতিবাদ করেন কয়েক জন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কোন আচরণে কতটা ‘প্রতিবাদ’ করা হবে, তার মাপকাঠি কোথায়? কারা, কেন স্বেচ্ছায় সেই প্রতিবাদের দায়িত্ব নেবেন? পুলিশ কি এ সব ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তাকেই বেছে নেবে?
তরুণী জানান, ওই যুবক যখন তাঁর সঙ্গীকে মারছিলেন, তখন কুড়ি-পঁচিশ জন জড়ো হয়ে যান। প্রতিবাদ করা দূরের কথা, অনেকেই ‘মিটিয়ে নেওয়ার’ পরামর্শ দেন। এই অবস্থায় থানায় পৌঁছন তরুণ-তরুণী। তাঁদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এক পুলিশকর্মী। তরুণী জানিয়েছেন, ওই মত্ত যুবক তখন সেখানেই ছিল। তিনি এবং তাঁর সঙ্গী ওই যুবককে শনাক্ত করতেই পুলিশ অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে আসে।
তরুণীর দাবি, থানায় গিয়ে এফআইআর করতে চান তিনি। পুলিশ রাজি হয়। কিন্তু তিনি এফআইআর-এ উল্লেখ করবেন বলে যখন ওই মত্ত যুবকের নাম জানতে চান, নাম জেনে বলতে অস্বীকার করে পুলিশ। ‘‘পুলিশ আমাদের বলে, ‘নামধাম আমরা বুঝব। তুমি শুধু তোমার অভিযোগটুকু লেখো।’ অভিযুক্তের নাম কেন উল্লেখ করব না, সে প্রশ্নের উত্তর পাইনি।’’— অভিযোগ তরুণীর। তিনি আরও জানান, এর পরে একাধিক বার জিজ্ঞেস করলেও অভিযুক্তের নাম জানায়নি পুলিশ।
পুলিশের পাল্টা দাবি, তরুণীর অভিযোগ অনুযায়ী অশ্লীল ভাবে বলপ্রয়োগ ও অশ্লীল বাক্য প্রয়োগের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে অভিযুক্তের নামে। এর পরে শুনানির তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে উভয় পক্ষকে। কিন্তু অভিযুক্তকে হাতে পেয়েও এফআইআর-এ নাম উল্লেখ করতে দিল না কেন পুলিশ? কেনই বা সেই নাম এখনও জানানো হল না অভিযোগকারিণীকে, পুলিশ সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।