জেএনইউ মার খাবে কেন, গর্জে উঠলেন ওঁরাও

সোমবার দুপুরে মেটিয়াবুরুজের কাচ্চি সড়ক মোড় থেকে বেরিয়েছিল মহিলাদের এমনই বিশাল এক মিছিল।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৪
Share:

সরব: মেটিয়াবুরুজের মিছিলে মহিলারা। সোমবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ভাবিয়ে তুলেছিল শাহিনবাগ। পথে টেনে নামাল জেএনইউ!

Advertisement

ঘরে বসে থাকলে যে আর চলবে না, সে বিষয়ে একমত তাঁরা সকলেই। তাই নয়া নাগরিকত্ব আইন থেকে জেএনইউ-তে হামলা— প্রতিবাদের স্লোগানে একাকার হয়ে গেল সব ধরনের ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের আগুনকে সম্বল করেই রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের ‘পর্দানসীন’ তকমা ভেঙে ওঁরা একজোট হয়ে রাস্তায় হাঁটলেন। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও হাতে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় লেখা পোস্টার বা ফেস্টুন। মিছিলের সামনে উর্দুতে লেখা ভারতীয় সংবিধানের মূল কথা।

সোমবার দুপুরে মেটিয়াবুরুজের কাচ্চি সড়ক মোড় থেকে বেরিয়েছিল মহিলাদের এমনই বিশাল এক মিছিল। এলাকার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার হাঁটেন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে গৃহবধূরা। মিছিলে বেশ কয়েক জন বৃদ্ধাকেও হাঁটতে দেখা যায়। জমিয়তে ইসলামি হিন্দের মহিলা শাখা এবং ‘গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশন’ (জিআইও)-এর যৌথ উদ্যোগে মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল।

Advertisement

স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার মেটিয়াবুরুজের মরিয়ম খানের। মরিয়মের কথায়, ‘‘আগে কখনও রাস্তায় নেমে মিছিলে হাঁটিনি। এখন দেশের যা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি, তাতে বাড়ি থেকে বেরোতে বাধ্য হলাম।’’ যাদবপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত জয়া আয়েশা। জয়ার সঙ্গে এ দিন মিছিলে হাঁটলেন তাঁর মা, একটি বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষা নীলম গজলা। নীলমের কথায়, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় দিল্লির শাহিনবাগ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। মা যদি ছোট্ট শিশুকে নিয়ে রাতের পর রাত খোলা আকাশের নীচে ঠান্ডায় বসে আন্দোলন করতে পারেন, তা হলে আমরা কেন বসে থাকব বন্ধ ঘরে? দেশের এই পরিস্থিতিতে চুপচাপ ঘরে বসে থাকা যায় না।’’ মেয়ে জয়া বললেন, ‘‘মিছিলে পা মেলাতে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছি।’’

সোমবার দুপুর একটা নাগাদ গার্ডেনরিচের কাচ্চি সড়ক মোড়ে তখন শ’তিনেক মহিলার ভিড়। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা। স্লোগানের সেই শব্দ শুনেই পাশের অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মিছিলে যোগ দিতে চলে আসেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী স্বাতী সান্যাল ও সিমরন দুলারি। স্বাতীর কথায়, ‘‘দেশে এখন যা যা ঘটছে, তা যে ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী, এই মিছিলে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিই তা বুঝিয়ে দেয়।’’

মুম্বই আইআইটি-র ছাত্রী সানিয়া মরিয়ম বা দিল্লির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসি পাঠরতা নেহা নাসিম এ দিন মিছিলে হেঁটেছেন তাঁদের মায়েদের সঙ্গে। সানিয়া ও নেহা ছুটিতে মেটিয়াবুরুজের বাড়িতে এসেছেন। সানিয়ার কথায়, ‘‘আন্দোলনের ন্যায্য অধিকারটুকুও মোদী সরকারের পুলিশ কেড়ে নিচ্ছে। বেছে বেছে ছাত্রছাত্রীদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশ ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করার পরে জেএনইউ-তে যা ঘটল, তার পরে আর ঘরে বসে থাকা যায় না।’’ সানিয়ার মা, পেশায় সমাজকর্মী সায়রা মঞ্জুর এ দিন মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘দেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি মুছে ফেলতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। আমরা এটা কোনও ভাবেই হতে দেব না। আমরা ভারতেই জন্মেছি। দেশ ছেড়ে যাব না, মরতে হলে এখানেই মরব।’’ মিছিলে দেখা গেল, পাশের মহিলার হাত ধরে হাঁটছেন এক বৃদ্ধা। সানুবার ফাতেমা নামে ওই বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমরা চার পুরুষ ধরে মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা। এখন আমাদের নাগরিকত্বের নতুন করে প্রমাণ দিতে হবে? এটা ভাবতেই পারছি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন