আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ (বাঁ দিকে) কিঞ্জল নন্দ এবং দেবাশিস হালদার (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন যে সমস্ত চিকিৎসক, তাঁদের একাংশের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সেই জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকেরা ব্যাঙ্কশাল আদালতে গিয়ে হাজিরা দিলেন এবং জামিন নিলেন।
আরজি কর আন্দোলনের সময়ে সহকর্মীর জন্য বিচার চেয়ে এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় সংস্কার চেয়ে চিকিৎসকদের একাংশ ধর্নায় বসেছিলেন। অনশন করেছিলেন। সে সময়ে পুলিশের একাধিক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত মামলাতেই পদক্ষেপ করে পুলিশ। আন্দোলনকারী সেই জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। চার্জশিটে পুলিশ যাঁদের নাম নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার, কিঞ্জল নন্দ, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়েরা রয়েছেন। রয়েছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীও। বৃহস্পতিবার মোট ১১ জন ব্যাঙ্কশাল আদালতে যান এবং জামিনের আবেদন করেন। তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
ব্যাঙ্কশাল আদালতে চিকিৎসকদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইয়াসিন রহমান। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। এই ডাক্তারেরা আরজি কর আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। হাসপাতালের ভিতরে সরকারি জায়গায় খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। সরকার তাতে ঘাবড়ে যায় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করে। তাই ডাক্তারেরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালতে হাজির হলেন এবং জামিন নিলেন। এই সংক্রান্ত মামলা লড়ে জিততে চান তাঁরা।’’ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ‘অসংখ্য মামলা’ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী রহমান।
চিকিৎসক গোস্বামী আদালত চত্বর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশে কলকাতা পুলিশ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ করেছে। আমরা যাঁরা নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম, মিছিল করেছিলাম, তাঁদের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারের খাতায় রোজ সই করছি, বেতন নিচ্ছি। তার পরেও পুলিশ আমাদের পলাতক হিসাবে দেখিয়েছে। অভিযোগ, আমরা নাকি পুলিশের উপর অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করেছি, তাদের কাজে বাধা দিয়েছি। কুশপুত্তলিকা দাহের জন্য অগ্নিসংযোগের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তাই নিজে থেকে আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিলাম।’’ চিকিৎসক গোস্বামীর বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানা এবং বৌবাজার থানায় দু’টি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে তিনি জামিন নিয়েছেন। সরকারকে কটাক্ষ করে চিকিৎসক গোস্বামীর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললে পুলিশ যত রকম ভাবে সম্ভব হয়রান করে। দুর্নীতির পক্ষে দাঁড়ালে সাত খুন মাফ! আমাদের আন্দোলন বরাবর শান্তিপূর্ণ ছিল। মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা সব সময়ে পুলিশকে জানিয়েই কাজ করেছি।’’