টাকা হাতাতেই পরিকল্পনা করে প্রৌঢ়াকে খুন

শনিবার কসবার টেগোর পার্কের বাসিন্দা, কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার শীলা চৌধুরীর দেহ উদ্ধার হয়। গোড়া থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল, এটি খুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

শীলা চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

টাকার লোভে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেই কসবার প্রৌঢ়া শীলা চৌধুরীকে খুন করে অভিযুক্তেরা। ঘটনায় শম্ভু কয়াল এবং বছর সতেরোর এক কিশোরকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি তদন্তকারীদের। পুলিশের আরও দাবি, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও করেছিল দুই অভিযুক্ত।

Advertisement

শনিবার কসবার টেগোর পার্কের বাসিন্দা, কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার শীলা চৌধুরীর দেহ উদ্ধার হয়। গোড়া থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল, এটি খুন। পরে ময়না-তদন্তেও একই কথা জানা যায়। রবিবার খুনের রহস্য ভেদ করে ধরা হয় ওই দু’জনকে। শম্ভু শীলাদেবীর বাড়িতে সাফাইয়ের কাজ করত। অন্য ধৃতের মা ওই বাড়ির পরিচারিকা ছিলেন। সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে শম্ভুর ২৪ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয়। অন্য দিকে, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের নির্দেশ মতো বছর সতেরোর ওই কিশোরকে হোমে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের কাছে শম্ভু দাবি করেছে, মাসখানেক আগে একটি মোবাইল সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে তার থেকে এক ব্যক্তি ২৪ হাজার টাকা হাতায়। বাবা, মা ও ভাইয়ের জমানো টাকা থাকত শম্ভুর কাছে। ওই টাকাই খরচ করেছে সে। ২৪ হাজার টাকার ঘাটতি মেটাতে সে শীলাদেবীর কাছে ধার চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে খুন করে টাকা হাতানোর ছক কষে।

Advertisement

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই তৃতীয় ব্যক্তি খুনে সরাসরি যুক্ত না হলেও তাঁর খোঁজ শুরু হয়েছে। তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। তৃতীয় ওই ব্যক্তির নামে প্রতারণার মামলা করা হতে পারে বলেও একটি সূত্রের দাবি। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই পুলিশকে বিভ্রান্ত করছিল শম্ভু। প্রথমে সে দাবি করে, শীলাদেবীকে দেওয়া ধার বাবদ ২৭ হাজার ফেরত না পেয়েই খুন করে। কিন্তু, টানা জেরায় সে টাকা হাতানোর কথা স্বীকার করে।

এক অফিসার জানাচ্ছেন, প্রাথমিক সন্দেহভাজনের তালিকায় শম্ভুর নাম ছিল না। কিন্তু ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, খুনি কমবয়সি এবং সংখ্যায় একাধিক। তখনই শম্ভুকে জিজ্ঞাসাবাদে বলা হয়, সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা গিয়েছে। তা শুনেই ঘাবড়ে যায় শম্ভু। সন্দেহ দৃঢ় হয় তদন্তকারীদের এবং লাগাতার জেরায় ভেঙে প়়ড়ে অভিযুক্ত।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ শম্ভু শীলাদেবীর ফ্ল্যাটে আসে। শাগরেদকে সে সিড়িতে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। ভিতরে ঢুকে শীলাদেবীর কাছে শরবত চায় শম্ভু। তা আনতে ওই প্রৌঢ়া গেলে সেই ফাঁকে সঙ্গীকে শোয়ার ঘরে খাটের নীচে লুকিয়ে রাখে। শীলাদেবী ওই ঘরে গেলে নাবালক সঙ্গী শীলাদেবীর পা ধরে টেনে তাঁকে ফেলে দেয়। শম্ভু শীলাদেবীকে চেপে ধরে লোহার কড়াই নিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করতে থাকে। পরে দু’জনে মিলে দেহ আনে ড্রয়িং রুমে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্রথমে চাদর দিয়ে মুখ চেপে ধরে এবং পরে বালিশ দিয়ে শ্বাসরোধ করে।

পুরোটা দুর্ঘটনা বলে চালানোর জন্য গ্যাস সিলিন্ডার-সহ আভেন এনে এবং পাইপ খুলে একটা কাপড় ও পর্দায় আগুন ধরিয়ে বেরিয়ে আসে তারা। সন্দেহ এড়াতে খুনের সময় এবং পরেও শম্ভু মোবাইল নিয়ে যায়নি। ‘‘মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন যে ধরিয়ে দিতে পারে, এই বুদ্ধিও ছিল তার,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন