আঠারো দিন আগে অপহৃত হওয়া কালীঘাটের বাসিন্দা শঙ্কর ভট্টাচার্যকে বুধবার তেলঙ্গানা থেকে উদ্ধার করল কলকাতা পুলিশ।
অপহৃত ব্যক্তি প্লেসমেন্ট সংস্থা চালাতেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, কাজের ব্যবস্থা করিয়ে দিতে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজের ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। এর পরে টাকা ফেরত না পাওয়ায় অপহরণ করা হয় ওই ব্যক্তিকে। তবে সেটাই অপহরণের একমাত্র কারণ কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
লালবাজারের পুলিশকর্তাদের দাবি, অপহৃতকে উদ্ধার করতে মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি। অপহরণকারীদের টাকা দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ৮ নভেম্বর বিকেলে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন প্লেসমেন্ট সংস্থার মালিক শঙ্করবাবু। পুলিশের কাছে তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ১০ নভেম্বর শঙ্কর তাঁকে ফোনে জানান, কয়েক জন তাঁকে অপহরণ করেছে। মোটা টাকা মুক্তিপণও চাইছে। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে কালীঘাট থানা ও কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখা। পুলিশ জানায়, অপহরণকারীরা শঙ্করবাবুর ফোন থেকেই তাঁর স্ত্রীকে জানায়, কয়েক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতকে ছাড়া হবে না।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (্অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, শঙ্করবাবুর মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান দেখে জানা যায়, তিনি তেলঙ্গানার সেকেন্দারপুরে রয়েছেন। শঙ্করবাবুর স্ত্রীকে তদন্তকারীরা পরামর্শ দেন, তিনি যেন অপহরণকারীদের বলেন, মুক্তিপণ দেওয়া হবে। তবে তাঁর কাছে এত টাকা না থাকায়, কয়েক দফায় তিনি তা দিতে পারবেন। অপহরণকারীদের দাবি মতো কিছু টাকা শঙ্করবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। অপহরণকারীরা তাঁর স্ত্রীকে জানায়, তারা শঙ্করবাবুর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা নিয়ে নেবে।
প্রথম দফায় কিছু টাকা নিয়ে অপহরণকারীরা ফের টাকা চায়। শঙ্করবাবুর স্ত্রী তাদের জানান, তাঁদের শিলিগুড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে বাকি টাকা মেটানো হবে। কিন্তু ওই সম্পত্তি বিক্রি করতে শঙ্করবাবুর সই জরুরি। অপহরণকারীরা হয় শঙ্করবাবুকে তাদের পছন্দ মতো জায়গায় নিয়ে এসে সই করার ব্যবস্থা করুক। নয়তো, তাঁর স্ত্রীকে তাদের পছন্দের জায়গায় ডেকে পাঠাক। অপহরণকারীরা শঙ্করবাবুর স্ত্রীকে জানায়, জমির দলিলের কপি স্ক্যান করে তাদের মেল করে দিতে। পুলিশের পরামর্শ মতো শঙ্করবাবুর স্ত্রী শিলিগুড়ি চলে যান। সেখান থেকে অপহরণকারীদের তিনি দলিলের কপি মেল করে পাঠিয়ে দেন। তখন ফের কিছু টাকা ঢালা হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, অপহরণকারীরা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সেকেন্দারপুর শাখার এটিএম থেকে টাকা তুলত। কালীঘাট থানা থেকে একটি দলকে পাঠানো হয় সেখানে। তারা স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে শঙ্করবাবুর টেলিফোনের টাওয়ারের অবস্থান চিহ্নিত করে।
বুধবার সেখানে একটি বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশ জানায়, বাড়িটি রঘুনাথ কারকা নামে এক ব্যক্তির। তাঁর বাড়ি থেকেই শঙ্করবাবুকে উদ্ধার করা হয়। ওই বাড়িতে ছিল অপহরণকারী কুন্দনপল্লি মালাল্লা, বিজয়কুমার সিংহ। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। অপহরণকারীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাড়ির মালিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।