পুর-বাজারের বিদ্যুৎ বিল মেটাতে বছরে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৮ কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য দোকানগুলির থেকে আয় ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, ঘাটতি ৪ কোটিরও বেশি। এটা ২০১১-’১২ সালের হিসেব। যা অব্যাহত ২০১২-’১৩ সালেও। সে বার পুরসভাকে বিল বাবদ মেটাতে হয় ৮ কোটি ১১ লক্ষ। আর আয় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি। বছরের পর বছর পুর-বাজারগুলির বিল মেটাতে কোটি কোটি টাকা বেরোচ্ছে পুর-ভাণ্ডার থেকে। কিন্তু শহরবাসীর দেওয়া করের টাকা এ ভাবে ‘অপচয়’ হচ্ছে কেন, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
বছরের পর বছর এত লোকসান নিয়ে কোনও মাথাব্যথা ছিল না প্রশাসনের। সম্প্রতি কন্ট্রোলার অব অডিটর জেনারেলের (ক্যাগ) রেসিডেন্ট অডিটর শাখা মেয়র ও পুর-কমিশনারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে তার কারণ জানতে চেয়েছেন। তাতে অস্বস্তি বেড়েছে পুর-প্রশাসনের। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ত্রিফলা ও লেক মল কেলেঙ্কারি, তেলের ট্রিপ চুরি-সহ একাধিক ঘটনায় জনগণের করের টাকা নয়ছয় করা নিয়ে সারা রাজ্যে তোলপাড় হয়েছে। প্রতিবাদে পুরসভার ভিতর-বাইরে নানা সময়ে বিক্ষোভও দেখায় বিরোধীরা।
ওই রিপোর্টে আছে, কলকাতা পুরসভার ৪৫টি বাজারে প্রায় ১০ হাজার দোকান। সেগুলির বিদ্যুতের বিল সংগ্রহ করে বাজার দফতর। আলো দফতর বিদ্যুতের বিল মেটায়। বাজারগুলিতে বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বেশি দেখে গত অর্থবর্ষে ফাইল চায় ক্যাগ-এর রেসিডেন্ট অডিট বিভাগ। মাস খানেক আগেই অডিটের কাজ শেষ করে ওই রিপোর্ট পাঠানো হয় পুর-প্রশাসনের কাছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ’১১-’১২ সালে হগ মার্কেট ও গড়িয়াহাট মার্কেট-সহ ১৭টি বাজারের জন্য পুরসভাকে বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। আর বাজার দফতর ওই বাজারগুলি থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ সংগ্রহ করেছে ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ। ’১২-’১৩ সালে মাত্র ৮টি বাজারের জন্য বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে ৮ কোটি ১১ লক্ষ। আর ওই সব বাজার থেকে পেয়েছে ৪ কোটি ৩ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, পরপর দু’বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা।
বাজার দফতরের এক অফিসার জানান, প্রথমত, পুর-বাজারে ব্যাপক বিদ্যুৎ চুরি হয়। তা ছাড়া বাজারের বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে হুকিং করা হয়। অধিকাংশ দোকানে মিটার নেই। বাইরে ফুটপাথের দোকানেও আলো জ্বলে পুর-সংযোগ থেকে। বাধা দিয়েও কিছু করা যায় না। ক্যাগ-রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ওই দু’বছরে ৮ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা লোকসানের মধ্যে শুধু হগ মার্কেটে লোকসানের পরিমাণ ৬ কোটি ৩৮ লক্ষ। ২০১৩-’১৪ সাল-সহ বর্তমান বছরেও লোকসানের সেই ধারা রয়েই গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
কিন্তু কলকাতা পুরসভার নাকের ডগায় থাকা ওই বাজারে বিদ্যুৎ চুরি কি রোখা যায় না?
কোনও জবাব দিতে পারেননি দায়িত্বরত বাজার দফতরের কেউই। অথচ হগ মার্কেট-সহ প্রতিটি বাজারেই সুপারইন্টেন্ড্যান্ট-সহ বেশ কয়েক জন অফিসার-কর্মী রয়েছেন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘পুরো বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ব্যাপারটা নিয়ে বসতে হবে।’’
রেসিডেন্ট অডিট শাখা সূত্রে খবর, কোটি কোটি টাকা লোকসানের কারণ কী, তা জানাতে বলা হয়েছিল পুর-প্রশাসনকে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও কারণ দেখাতে পারেনি পুর-প্রশাসন। যেটুকু বলেছে, তার সমর্থনেও কোনও প্রমাণপত্র জমা দিতে পারেনি। ওই ব্যাপারে পুরকতার্দের নজরদারি বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছে ক্যাগ।