অবৈধ পার্কিং, পুরসভার ক্ষতি বছরে ৩০ কোটি 

অভিযোগ, ঘণ্টায় ১০ টাকা ভাড়া নির্দিষ্ট থাকলেও তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫০ টাকা। যেখানে গাড়িটি এক ঘণ্টার চেয়েও কম সময়ের জন্য রাখা ছিল বলে ওই অফিসারের দাবি।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

গাড়ি পার্কিংয়ে পুর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আকছারই জমা পড়ে কলকাতা পুরসভায়। এত দিন সে সবের সত্যতা নিয়ে টালবাহানা ছিল পুরসভায়। এ বার খোদ পুরসভার পার্কিং দফতরের চিফ ম্যানেজার শিকার হলেন সেই বর্ধিত ভাড়ার!

Advertisement

অভিযোগ, ঘণ্টায় ১০ টাকা ভাড়া নির্দিষ্ট থাকলেও তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫০ টাকা। যেখানে গাড়িটি এক ঘণ্টার চেয়েও কম সময়ের জন্য রাখা ছিল বলে ওই অফিসারের দাবি। নিজের পরিচয় না দিয়ে নির্ধারিত ভাড়ার পাঁচ গুণ বেশি টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন ওই অফিসার। অফিসে ফিরে ওই পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুও করেন তিনি। এই ঘটনা দেখিয়ে দিল, পার্কিংয়ের জন্য পুর নির্ধারিত ভাড়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরে ইচ্ছেমতো রোজগার করছে বরাত পাওয়া কয়েকটি সংস্থা। এর পরেও কেন পুর প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে না, প্রশ্ন সেখানেই।

যদিও এ নিয়ে সরব হয়েও যে বিশেষ লাভ হবে, এমন আশ্বাস দিতে পারছে না পুর মহল। কারণ, ওই অভিযুক্ত সংস্থার মালিকপক্ষকে পুর ভবনে তলব করা হলে তিনি পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। এই মুহূর্তে শহরে পুরসভার লাইসেন্স প্রাপ্ত পার্কিং প্রায় ৭২৫টি। তা থেকে বার্ষিক আয় ১৮ কোটি টাকার মতো। পুরসভা জানাচ্ছে, খাতায়কলমে যা রয়েছে তার চেয়ে পার্কিংয়ের জায়গা বেশি শহরে। যা অবৈধ। অথচ ওই সব পার্কিংয়ের টাকা পুর ভাঁড়ারে ঢুকলে বছরে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা আয় হতে পারত বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকেরা। পুরসভার পার্কিং দফতরের একটি সূত্রের দাবি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতানেত্রীর সঙ্গে পুলিশ এবং পুর প্রশাসনের কারও কারও মদতে চলছে ওই অবৈধ কাজ। সে কারণেই কিছু করা যায় না।

Advertisement

পার্কিং দফতরের চিফ ম্যানেজারের ঘটনাটি ৮ অগস্টের। পার্ক স্ট্রিটের কাছে লিটল রাসেল স্ট্রিটে গাড়ি রেখে এক অসুস্থ সহকর্মীকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। এক ঘণ্টার মধ্যেই ফেরার সময়ে পার্কিংয়ের এক কর্মী তাঁর থেকে ৫০ টাকা দাবি করেন। অফিসার ওই কর্মীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘৫০ টাকা কেন? এক ঘণ্টায় তো ১০ টাকা!’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই কর্মী তাঁকে ৫০ টাকাই দিতে হবে বলে জানান।’’ এটা যে জুলুম তা বুঝিয়ে দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন তিনি। তখনও অবশ্য নিজের পরিচয় দেননি তিনি। কেন পরিচয় দেননি? জানতে চাইলে ওই অফিসার বলেন, ‘‘পরিচয় দিলে হয়তো ৫০ টাকা নিতেন না। তাই টাকা দিয়েই ওঁদের কারবারটা দেখে নিলাম।’’

দিন কয়েক আগেই মেয়রের নেতৃত্বে পুর ভবনে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গাড়ি পার্কিংয়ে পুরসভা নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে বেশি ভাড়া নিলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে তোলাবাজির মামলা করবে। সেই বৈঠকের পরেই এই ঘটনা ফের এক বার পুর প্রশাসনের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শহরের পার্কিংয়ের প্রকৃত পরিস্থিতি। অভিযোগ, পুলিশ, পুর প্রশাসনকে ধার ধারে না ওই সব সংস্থা। যে কারণে লিটল রাসেল স্ট্রিটের বরাত পাওয়া সংস্থার মালিক পুর ভবনে দাবি করেছেন, সেখানে তাঁদের কোনও লোকই ছিলেন না। তাই কে কী বলেছেন, কত টাকা নিয়েছেন তা তাঁরা জানেনই না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন