রাজ্য অর্থ দফতরের নয়া ফরমানে বিপাকে পুরসভা

বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভার রেওয়াজ ছিল, ২০, ৩০, ৪০, এমনকী, ৫০ শতাংশ বেশি দর থাকলেও সংশ্লিষ্ট টেন্ডারকারীকে কাজ দেওয়া যেত।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

রাজ্য অর্থ দফতরের একটি নির্দেশ ‘স্তব্ধ’ করে দিয়েছে পুরসভার যাবতীয় কাজ।

Advertisement

বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভার রেওয়াজ ছিল, ২০, ৩০, ৪০, এমনকী, ৫০ শতাংশ বেশি দর থাকলেও সংশ্লিষ্ট টেন্ডারকারীকে কাজ দেওয়া যেত। এ বার পুরসভার সেই ক্ষমতায় রাশ টানতে চেয়ে রাজ্যের অর্থ দফতর একটি সার্কুলার পাঠিয়েছে পুর প্রশাসনের কাছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রে যদি প্রস্তাবিত খরচের চেয়ে পাঁচ শতাংশের বেশি টাকার দরপত্র জমা পড়ে এবং পুর প্রশাসন তা অনুমোদন করতে চায়, তা হলে আগে তা পাঠাতে হবে রাজ্যের অর্থ দফতরের কাছে। সেখান থেকে সুবজ সঙ্কেত মিললে তবেই সেই কাজের বরাত দিতে পারবে পুর প্রশাসন। নতুন এই বিজ্ঞপ্তির ফলে মহাসঙ্কটে পুরসভার প্রায় সব ক’টি দফতর। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাখ্যা, ‘‘এখানে কাজের টেন্ডার ডাকা হয় পূর্ত দফতরের ২০০৮, ২০১০ সালের তৈরি করা শিডিউলে। সেই সময়ের থেকে এখন প্রায় সব জিনিসেরই দর অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তাই টেন্ডারে প্রস্তাবিত দরের থেকে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি দর দেওয়া হলেও তা নতুন শিডিউলের দরের প্রায় সমান। সেই কারণে সেটাই গ্রহণ করা হয়। এতে বাড়তি কোনও খরচ হয় না।

রাজ্যের অর্থ দফতরের পাল্টা ব্যাখ্যা, তা-ই যদি হবে, তা হলে পূর্ত দফতরের নতুন শিডিউল পুরসভা অনুসরণ করে না কেন? ২০১০ সালের পরে অন্তত তিন-চার বার শিডিউল বদল হয়েছে। তা কেন মানা হয় না পুরসভায়? পুরসভার অন্দরেও শিডিউল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একাধিক মেয়র পারিষদেরই প্রশ্ন, পুরসভা নিজেরা কেন শিডিউল তৈরি করে না? পূর্ত দফতরের থেকে তা হলে তো নিতে হয় না। তাঁরা জানান, এক সময়ে পুরসভা নিজস্ব শিডিউল তৈরি করে নিত। এখন তা বন্ধ কেন? পুরসভায় তো কয়েকশো ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। তা হলে নিজস্ব শিডিউল তৈরি করে নিতে অসুবিধাই বা কোথায়?

Advertisement

তবে এই তরজার মধ্যে আটকে রয়েছে পুর উন্নয়নের অনেক কাজ। দক্ষিণ কলকাতার এক বরো চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘অর্থ দফতরের নির্দেশ মানতে হলে প্রায় ৯০ শতাংশ ফাইলই পাঠাতে হবে নবান্নে। পুরসভার ভিতরেই ফাইল চালাচালি করতে অনেক সময় চলে যায়। এর উপরে নবান্ন যোগ হলে তো কাজের বারোটা বেজে যাবে। সময়ের কাজ সময়ে করাই যাবে না।’’ বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে যাবে।

কেউ কেউ অর্থ দফতরের নির্দেশ উপেক্ষা করবেন বলে মনস্থ করলেও বাদ সেধেছে পুরসভার নিজস্ব এক সার্কুলার। সম্প্রতি সমস্ত দফতরে তা পাঠিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে, অর্থ দফতরের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আর সব চেয়ে ফ্যাসাদে পড়েছে পুরবোর্ড। সম্প্রতি মেয়র পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি ওঠে। সেখানে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, অর্থ দফতরের ওই নির্দেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই নিয়ম চালু করার জন্য আরও কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছে। যে সব বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে, সেগুলিকে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে বলে জানান এক পুর আধিকারিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন