জমির দর নিয়ে বিতর্ক চলছে রসপুঞ্জে। ধাপার বিকল্প হিসেবে নতুন একটি ভাগাড় তৈরি করতে বাছা হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই এলাকার বেশ কিছুটা জমি। কিন্তু দামের গেরোয় আটকে গিয়েছে সেই প্রক্রিয়া। রসপুঞ্জের পাশাপাশি নিউ টাউনের ছাপনা মৌজাতেও ২০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াও এখন বন্ধ রাখতে বলেছে প্রশাসন। ফলে কলকাতা শহরের জঞ্জাল ফেলার নতুন জায়গা কোথায় হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন পুরকর্তারা।
শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন বারবারই বলেছেন, শহরের জঞ্জাল ফেলার জন্য নতুন জমি বাছা হচ্ছে। এ বিষয়ে রামসার কনভেনশনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানিয়েছিলেন, ধাপা এলাকাটি ‘ওয়েটল্যান্ড’ (জলাভূমি) হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সেখানে নতুন করে জঞ্জাল ফেলার জমি নেওয়া যাবে না। তার পরেই রাজ্য সরকারের কাছে জঞ্জাল ফেলার জমির জন্য আবেদন জানানো হয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, নিউ টাউনের ছাপনা মৌজায় ২০ একর জমি দেওয়ার কথা জানায় সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার অনুমোদনও হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ওই জমির মধ্যে ৬ একর জায়গায় জঞ্জালের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হবে। বাকি ১৪ একরে বৈদ্যুতিন জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা থাকবে। সেই মতো পুরসভা ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট’-এর জন্য দরপত্রও চায়। সেই ব্যস্ততার মধ্যেই সম্প্রতি নির্দেশ আসে, এখন এ নিয়ে আর এগোনোর দরকার নেই।
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ওই দরপত্র প্রক্রিয়া বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পুর প্রশাসন। ওই আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকার নিউ টাউনের জমির জন্য চার জন ‘ট্রানজাকশন অ্যাডভাইসার’ নিয়োগ করেছে। তাঁরা জমির সব কিছু খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন। তত দিন সেখানে কিছু করা যাবে না। তাতেই পিছিয়ে পড়েছে নিউ টাউনে জঞ্জাল ফেলার পরিকল্পনা।
রসপুঞ্জে আলাদা জায়গা কেনার কথা হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। প্রাক্তন মেয়র শোভনবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন, রসপুঞ্জে নতুন জঞ্জাল ফেলার জায়গা হবে। এখন জমির দাম নির্ধারণ প্রশ্নে আটকে গিয়েছে সেই পরিকল্পনাও। জানা গিয়েছে, পতিত জমি হিসেবে প্রথমে জেলা প্রশাসন দর জানিয়েছিল, কাঠা প্রতি ২৭ হাজার টাকা। পরে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেমি-কমার্শিয়াল হিসেবে দেখিয়ে ওই জায়গার দাম হয় কাঠা প্রতি ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা।
এ দিকে, ১৮ বছর আগেই জানা গিয়েছিল, ধাপার মাঠ জঞ্জালে ‘স্যাচুরেটেড’ বা সম্পৃক্ত। শহরে জঞ্জাল ফেলার নতুন জায়গা না থাকায় ধাপাতেই এখনও ফেলা হচ্ছে প্রতিদিনের জঞ্জাল। পরিবেশবিদেরা মনে করছেন, এখনই জঞ্জাল ফেলার নতুন জায়গা না হলে পরিবেশ দূষণ নিয়ে ভুগতে হবে শহরবাসীকে। দিন কয়েক আগে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম হুগলির কয়েকটি পুরসভায় জঞ্জাল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ধাপার জঞ্জাল সমস্যার সমাধান করার কথাও জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ধাপার জঞ্জাল এবং তার ট্রিটমেন্ট নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’