শহর জুড়ে ডেঙ্গির বলি বাড়ছে লাফিয়ে, তবু হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের
Dengue

মশা মারতে অচল ব্লিচিংই অস্ত্র মেয়রের

ব্লিচিং কি ডেঙ্গি ঠেকাতে পারে? গত জানুয়ারিতে ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর তৎকালীন ডিরেক্টর এ কে ধারিবাল ডেঙ্গি নিয়ে পুরসভার এক সেমিনারে এসে বলেছিলেন, মশা মারতে ব্লিচিং পাউডার কোনও কাজে লাগে না।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
Share:

নিজের পাড়ায় ব্লিচিং পাউডার ছড়াচ্ছেন মেয়র। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি রুখতে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর তা ঘিরেই সোমবার জোর জল্পনা পুরভবনে। পুরসভার ডেঙ্গি-বিশেষজ্ঞ, পুর অফিসারেরা মনে করেন, মশার লার্ভা মারায় কোনও ভূমিকা নেই ব্লিচিং পাউডারের। তা হলে মেয়রের এই উদ্যোগ কেন? বিরোধী কাউন্সিলরদের বক্তব্য, এটা মেয়রের নাটক! তবে সব চেয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী-অফিসারেরা। কারণ, এত দিন ধরে তাঁরাই বারবার বলেছেন, মশার লার্ভা নিধনে ব্লিচিংয়ের কোনও ভূমিকা নেই। তাই শহর জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে যখন চিন্তায় প্রশাসন, তখন বেহালার পর্ণশ্রীতে নিজের ওয়ার্ডে মেয়র ব্লিচিং ছড়ানোয় তাঁরাও ব্যাকফুটে। আর মেয়রের ব্লিচিং ছড়ানোয় অনুপ্রাণিত হয়ে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরও ওই কাজে নেমে পড়েছেন।

Advertisement

ব্লিচিং কি ডেঙ্গি ঠেকাতে পারে? গত জানুয়ারিতে ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর তৎকালীন ডিরেক্টর এ কে ধারিবাল ডেঙ্গি নিয়ে পুরসভার এক সেমিনারে এসে বলেছিলেন, মশা মারতে ব্লিচিং পাউডার কোনও কাজে লাগে না। কেউ যদি তা করে, সেটা লোকদেখানো ছাড়া কিছু নয়। পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায়ও জানান, ব্লিচিং পাউডার বা কীটনাশক ছড়িয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এমনকী, আন্তর্জাতিক ডেঙ্গি-বিশেষজ্ঞ ডোয়ান জে গবলারও জানিয়েছেন, ডেঙ্গিবাহী মশা মারার কাজে ব্লিচিং অচল। তা হলে ডেঙ্গির উপদ্রব বাড়ায় মেয়র ব্লিচিং ছড়ালেন কেন? মেয়র জবাব দিতে চাননি। কেবল বলেছেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে। অযথা রাজনীতি করছেন বিরোধীরা।’’

সোমবার পুরভবনে মেয়রের ঘরের সামনে মশারি টাঙিয়ে বিক্ষোভ দেখান বাম কাউন্সিলরেরা। তাঁরাও মেয়রের ব্লিচিং ছড়ানোকে ‘নাটক’ বলেই অভিহিত করেছেন। বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের রত্না রায় মজুমদার বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ছবি দেখানোর জন্যই মেয়র এ সব নাটক করেছেন। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরই বারবার বলছে, ব্লিচিং দিয়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধ করা যায় না।’’

Advertisement

শুধু বিরোধীদের প্রশ্নবাণে নয়, শাসক দলের কাউন্সিলরদের মধ্যেও শুরু হয়েছে প্রতিক্রিয়া। দক্ষিণ কলকাতার এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘আমরা পড়েছি সমস্যায়। স্বাস্থ্য দফতর বলছে ব্লিচিং দিয়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধ হয় না। আবার মেয়র
নিজে ব্লিচিং ছড়ালেন। এখন কী করব, তা-ই ভাবছি।’’

মেয়রকে ব্লিচিং ছড়াতে দেখে সোমবার পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে প্রচুর ফোন আসে। ডজনখানেক কাউন্সিলর স্বাস্থ্য দফতরকে বলেছেন, ‘‘ব্লিচিং পাউডার দিন। আমরাও নিজের ওয়ার্ডে ছড়াতে চাই।’’ আগে পুর স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা তাঁদের বোঝাতে পারতেন, ব্লিচিংয়ে ডেঙ্গির মশা মরে না। কিন্তু মেয়রের ওই কাণ্ড দেখে তাঁরাও পড়েছেন বেকায়দায়। এখন তাঁরা বলছেন, ‘‘ব্লিচিং আমরা দিই না। ওটা জঞ্জাল দফতরের বিষয়।’’ যদিও মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ পরিষ্কার বলেছেন, ‘‘মশা মারতে পুরসভা ব্লিচিং ছড়ায় না।’’

মেয়রের দেখাদেখি দক্ষিণ কলকাতার কয়েক জন কাউন্সিলর ব্লিচিং না পেয়ে চুনও দেওয়া শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার চুনকেই ব্লিচিং বলে চালাচ্ছেন। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ডেঙ্গিবাহী মশা নিধনে স্বাস্থ্য দফতর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে কাজ করছিল। এখন ব্লিচিং-বিভ্রাটে মশা নিয়ন্ত্রণ শিকেয়। কিন্তু কাউকে বোঝানো যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন