গাছ বসানোর জায়গা খুঁজতে হিমশিম পুরসভা

এই পরিস্থিতিতে গাছ-নীতি ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন পুরকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আপাতত হাজার চারেক গাছ ১৬ নম্বর বরোর অধীনস্থ এলাকায় লাগানো হবে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

ক‌ংক্রিটের জঙ্গলে গাছ কোথায় বসানো হবে, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছে কলকাতা পুরসভা। কারণ, শহরে জায়গার অভাব। ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘আর্বান ফরেস্ট্রি’ দফতর চালু হয়েছে বটে, কিন্তু গাছ বসানোর জায়গা না পাওয়া গেলে শুধু দফতর দিয়ে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে পুর প্রশাসনের অন্দরেই।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে গাছ-নীতি ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন পুরকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আপাতত হাজার চারেক গাছ ১৬ নম্বর বরোর অধীনস্থ এলাকায় লাগানো হবে। কারণ, সেখানে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, আরও দশ হাজারের মতো গাছ শহরের কোথায় কোথায় বসানো যায়, সে ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। ওয়ার্ডভিত্তিক ফাঁকা জায়গা কোথায় রয়েছে, তা জানার জন্য কথা বলা হচ্ছে কাউন্সিলরদের সঙ্গেও। কিন্তু শহরকেন্দ্রিক বনায়ন শেষ পর্যন্ত কতটা বাস্তবায়িত হবে, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছেন পুরকর্তাদের একাংশ। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘গাছ বসানোর জন্য তো জায়গা লাগবে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। আমরাও নিজেদের মতো জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছি। জায়গা পাওয়া গেলেই গাছ বসানো হবে। কিন্তু জায়গারই তো সমস্যা!’’

জায়গার অভাবের যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পরিকল্পনা ঠিক ভাবে হচ্ছে না বলেই গাছ বসানোর জায়গা পাচ্ছে না পুরসভা। পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর এ বিষয়ে বলেন, ‘‘পুরসভার পার্কগুলিতেই তো গাছ বসানো যায়। সেখানকার মাটি ভাল, জায়গাও রয়েছে। তাছাড়া শহরের অনেক জায়গাতেই পরিকল্পনামাফিক গাছ বসানোর জায়গা রয়েছে। গাছ বসানোর জায়গা নেই, এটা হাস্যকর কথা!’’ প্রসঙ্গত, বনানী কক্করদের করা মামলার প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে, কোনও গাছের গোড়া ঘিরে বেদি তৈরি করা যাবে না। যেখানে এমন বেদি রয়েছে, তা ভেঙে ফেলতে হবে।

Advertisement

পরিবেশকর্মীদের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, কোথায় গাছ বসানো হবে, এ ব্যাপারে শুধুই কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা না বলে নাগরিকদের মতামতও নিতে পারে পুরসভা। কারণ, শহরে সবুজ বৃদ্ধি করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সকলকে এ কাজে যুক্ত করতে হবে। শুধুই প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক তৎপরতায় গাছ বসানোর সমস্যার সমাধান করা যাবে না! এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘কাউন্সিলর বা পুরসভার যে জায়গাটা চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে, সে জায়গাটা এক জন নাগরিক হয়তো বলে দিতে পারবেন। গাছের সংখ্যা বাড়লে শহরের দূষণ এমনিই কমবে। তার জন্য সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার।’’

পুরকর্তাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, জায়গার সমস্যার মধ্যেই গাছ বসানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বসানোর ক্ষেত্রে এমন গাছকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যার জন্য অল্প জায়গা লাগে। যেমন দেবদারু। প্রসঙ্গত, দেবদারুর কথা মেয়র ফিরহাদ হাকিমও একাধিক বার বলেছেন। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ফুটপাতের পাশে দেবদারু ছাড়া অন্য বড় গাছ বসানোও যাবে না। তাই দেবদারু তালিকায় সবার উপরে। দেবদারু বসাতে পারলে আমাদের হিসেব বলছে, কমপক্ষে ১০ হাজার গাছ লাগানো যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন