মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জল সমস্যায় নজর

কলকাতায় পানীয় জলের কোনও অভাব হবে না, অতীতে বারবার এমন দাবি করেছিলেন শোভনবাবু।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৪
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর নজর দেওয়ার পরই জল সমস্যা নিয়ে নড়ে বসেছে পুর প্রশাসন। —ফাইলচিত্র।

পানীয় জল সরবরাহের সমস্যা নিয়ে জেরবার কলকাতা পুরসভার শাসক দলের অন্তত ১৯ জন কাউন্সিলর। দ্রুত ওই সমস্যা মেটানোর কোনও ব্যবস্থা না নিলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডগুলি থেকে জেতা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করছেন দলের অনেকেই। এমনকি কিছু ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের হাতছাড়াও হতে পারে, বলছেন যাদবপুর ও টালিগঞ্জ এলাকার কয়েক জন কাউন্সিলর।

Advertisement

প্রয়োজনের তুলনায় পানীয় জল সরবরাহ কম হওয়ায় বাইপাসের দু’ধারের বিভিন্ন এলাকা-সহ গড়িয়া, বাঘা যতীন, যাদবপুর, টালিগঞ্জের বহু মানুষকে তা কিনতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ‘খাবার জল পাচ্ছি না’ এই অভিযোগ শুনতে শুনতে হয়রান ওই এলাকার কাউন্সিলরেরা। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় পানীয় জলের অভাব বেশ কয়েক মাস ধরেই। সদ্য প্রাক্তন হওয়া মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ পুর প্রশাসনের কর্তাদের কানেও তা তোলা হয়েছিল।

গত ১৯ নভেম্বর পুরসভার ১১ নম্বর বরো অফিসে ওই কাউন্সিলরেরা বিষয়টি জানান রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী তথা টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অরূপবাবু আবার যাদবপুর, টালিগঞ্জে দলের দায়িত্বেও রয়েছেন। স্বভাবতই বিষয়টা এখন পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কানেও। বৃহস্পতিবার আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ অডিটোরিয়ামে নতুন মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানেই পানীয় জলের সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রী তোলেন। সেই বার্তা পেয়েই পুরসভার মেয়র পদের প্রার্থী ফিরহাদ হাকিমও জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন পুর পারিষদ ক্ষমতায় এসে সেই সমস্যা মেটাতে তৎপর হবে।

Advertisement

কলকাতায় পানীয় জলের কোনও অভাব হবে না, অতীতে বারবার এমন দাবি করেছিলেন শোভনবাবু। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, দৈনিক ১৬-২৪ ঘণ্টা জল সরবরাহের লক্ষ্যে এগোচ্ছে পুরসভা। সূত্রের খবর, বর্তমানে টালা, গার্ডেনরিচ, ধাপা এবং জোড়াসাঁকো প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৪০ কোটি গ্যালনেরও বেশি জল উৎপাদন হয়। গত জনগণনা অনুসারে শহরে প্রায় ৪৫ লক্ষ জনসংখ্যা। সেই তুলনায় জলের জোগান কম হওয়ার কথা নয় বলেই জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।

তবে কেন যাদবপুর, টালিগঞ্জে পানীয় জলের সরবরাহ কম? সমস্যা বহুল ৯২, ৯৪ থেকে ৯৯, ১০১ থেকে ১০৬ এবং ১০৯ থেকে ১১৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কথায়, একটা সময়ে চাহিদা মেটাতে ওই এলাকায় ভূগর্ভস্থ জল গভীর নলকূপের সাহায্যে তোলা হত। ধাপা জলাধার তৈরি এবং গার্ডেনরিচ জল প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায় বেশির ভাগ নলকূপ বন্ধ করা হয়। অভিযোগ, পুরসভার পানীয় জলের চাপ এতই কম যে অনেক এলাকায় তা পৌঁছয় না। তাই নলকূপের গভীরতা বাড়িয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টাও হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন কয়েক জন কাউন্সিলর। তবু জল ওঠেনি। পঞ্চসায়রের বাসিন্দা এক প্রবীণার বক্তব্য, ‘‘কয়েক মাস ধরে পুরসভার সরবরাহ করা জলের জোগান এতই কম যে ন্যূনতম চাহিদাও মিটছে না। প্রতিদিন জল কিনতে হচ্ছে।’’ এমন অভিযোগ এলাকার অনেক বাসিন্দারই। লোকসভা ভোটের আগে তাই চিন্তা বাড়ছে শাসকদলের।

কী করছে পুর প্রশাসন?

এক পদস্থ পুর অফিসারের কথায়, ইতিমধ্যেই গত সাত-আট মাসে বার পাঁচেক জল সরবরাহ দফতরের অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। অরূপবাবুও নব মহাকরণ, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুর কর্তাদের ডেকে আলোচনা করেছেন। জানা গিয়েছে, গার্ডেনরিচ থেকে টালিগঞ্জে জল সরবরাহ কম হচ্ছে। আবার ধাপা থেকে যে পরিমাণ জল সরবরাহ হওয়ার কথা তা-ও হচ্ছে না। অভিযোগ উঠছে, বিগত কয়েক মাস ধরে পুরসভা পরিচালনার কাজেও গাফিলতি হয়েছে। ফলে উৎপাদন থাকলেও জল বিতরণের কাজে ঢিলেমি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নজরে বিষয়টি আসার পরে এখন নড়ে বসেছে পুর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন