বড় আবাসন ও সরকারি অফিসের ছাদে রাখা টব বা পাত্রে জমে থাকছে বৃষ্টির জল। সেই জলে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। তাই এ বার প্রতিটি আবাসন ও সরকারি অফিসের ছাদে নজরদারি চালাবে পুরসভা ও প্রশাসন। গত বছর ডেঙ্গি ও অজানা জ্বরে অনেকের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক ভবনে সমস্ত পুরসভা ও প়ঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এমনই নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর।
ডেঙ্গি ও অজানা জ্বরে সব চেয়ে উপদ্রুত জেলা উত্তর ২৪ পরগনার সাতটি পুরসভার চেয়ারম্যানকে নিয়ে শুক্রবারই মহাকরণে বৈঠক করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানে ডেঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে ওই জেলার পরিকাঠামোর অভাব নিয়েও আলোচনা হয়। তার পরে বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা প্রশাসনিক বৈঠকে জানানো হয়, ডেঙ্গি বা অজানা জ্বরের খবর মিললেই সঙ্গে সঙ্গে তা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরকে জানাবে সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি। গত কয়েক দিনের রিপোর্টে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির পরে প্রচুর সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসনের ছাদেও জমা জলে মশা জন্মাচ্ছে। ওই সমস্ত জায়গায় হানা দিয়ে মশা নির্মূলের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডেঙ্গি ও অজানা জ্বরে কত জন আক্রান্ত এবং কত জন মারা গিয়েছেন, তার যথাযথ পরিসংখ্যান মেলেনি বলে জেলার বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সে ব্যাপারেও এ বার আগে থেকেই সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ কতটা এগোল, প্রতি শুক্রবার বিকেলে তা নিয়ে জেলার প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েতের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠক করবে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর।
শনিবার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘কোথায় কোন পরিবারে কার ডেঙ্গি বা জ্বর হয়েছে, তার বাড়ির আশপাশে কোথাও আবর্জনা পড়ে রয়েছে কি না, সেই তথ্য যাচাই করে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, গ্রাম সংসদ এবং পঞ্চায়েত থেকে শহরাঞ্চলের পুরসভা, সর্বত্রই ‘সর্বাধিক’ গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। তিনি জানান, নজরদারি চালানোর পাশাপাশি ডেঙ্গি মোকাবিলায় কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, জ্বর হলে কী করণীয়, সে সব নিয়ে লিফলেট তৈরি করে তা বাড়ি বাড়ি বিলি করা হচ্ছে। জেলার সর্বত্র পোস্টার, প্ল্যাকার্ডেও সতর্কীকরণের কাজ চলবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় পথনাটিকার সাহায্যেও প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
তবে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি এবং অজানা জ্বর শুরু হয়ে গিয়েছে দমদম, ব্যারাকপুর, দেগঙ্গা ও হাবরায়। প্রশাসনিক তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও গত বারের মতো আবার তা মহামারীর চেহারা নেয় কি না, সেই আতঙ্কেই রয়েছেন বাসিন্দারা।