৩ ডাক্তারের শাস্তি এড়িয়ে তিরস্কৃত কাউন্সিল

মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই) কলকাতার তিন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সুপারিশ করেছিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে। সেই সুপারিশ না-মানায় কলকাতা হাইকোর্ট মঙ্গলবার তিরস্কার করল রাজ্য কাউন্সিলকে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, রাজ্য কাউন্সিলকে দ্রুত ওই সুপারিশ রূপায়ণ করতে হবে। অর্থাৎ শাস্তি দিতেই হবে তিন চিকিৎসককে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:৪৭
Share:

মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই) কলকাতার তিন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সুপারিশ করেছিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে। সেই সুপারিশ না-মানায় কলকাতা হাইকোর্ট মঙ্গলবার তিরস্কার করল রাজ্য কাউন্সিলকে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, রাজ্য কাউন্সিলকে দ্রুত ওই সুপারিশ রূপায়ণ করতে হবে। অর্থাৎ শাস্তি দিতেই হবে তিন চিকিৎসককে।

Advertisement

২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর তেঘরিয়ার এক নার্সিংহোমে সোমা সাহারায় নামে বাগুইআটির এক বাসিন্দার পিত্তাশয় ও জরায়ুতে দু’টি অস্ত্রোপচার হয়। দু’দিন পরে তিনি মারা যান। সোমাদেবীর স্বামী, খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষক বিমান সাহারায় অভিযোগ করেন, জয়দীপ বসু, তপন মুখোপাধ্যায় ও কমলকুমার দাস নামে তিন চিকিৎসকের গাফিলতিতেই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সুবিচার চেয়ে এমসিআইয়ের দ্বারস্থ হন তিনি।

এমসিআইয়ের আইনজীবী সৌগত ভট্টাচার্য জানান, এমসিআই ২০১৩-র ৩০ জানুয়ারি রাজ্য কাউন্সিলের কাছে অভিযোগপত্র পাঠিয়ে ছ’মাসের মধ্যে অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে বলে। অভিযোগ, নিষ্পত্তি তো দূরের কথা, রাজ্য কাউন্সিল সেই অভিযোগ নিয়ে শুনানির ব্যবস্থাই করেনি। বিমানবাবু ফের অভিযোগ জানান এমসিআইয়ের কাছে। ২০১৪-র মে মাসে ওই তিন চিকিৎসককে ডেকে পাঠায় এমসিআই। তিন চিকিৎসক মে মাসে হাজির হতে পারেননি। তাঁরা ১৯ জুলাই এমসিআইয়ের দফতরে গিয়ে গাফিলতির যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। গত ২৩ জানুয়ারি এমসিআই রাজ্য কাউন্সিলকে চিঠি দিয়ে জয়দীপবাবুর রেজিস্ট্রেশন দু’বছর, তপনবাবুরটি তিন বছর এবং কমলবাবুর রেজিস্ট্রেশন পাঁচ বছরের জন্য বাতিল করতে বলে।

Advertisement

ওই তিন চিকিৎসকের আইনজীবী অজয় চট্টোপাধ্যায় জানান, এমসিআইয়ের সুপারিশের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে বিচারপতি সৌমিত্র পালের আদালতে মামলা করেছিলেন তাঁরা। গত মার্চে বিচারপতি পালের আদালতে মামলাটি ওঠে। বিচারপতি পাল স্থগিতাদেশ না-দিয়ে রাজ্য কাউন্সিলকে অভিযোগের শুনানি শুরু করার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী শুনানি শুরু করে রাজ্য কাউন্সিল।

বিচারপতি পালের আদালত স্থগিতাদেশ না-দেওয়ায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করেন ওই তিন চিকিৎসক। এ দিন তার শুনানি ছিল। ডিভিশন বেঞ্চে বিমানবাবুর আইনজীবী ইন্দ্রনীল রায় জানান, তাঁর মক্কেল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের শুনানিতে যোগ দিতে চান না। তা শুনে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এমসিআইয়ের সুপারিশই রাজ্য কাউন্সিলকে বাস্তবায়িত করতে হবে। ওই অভিযোগের শুনানি থেকে বিরত থাকতে হবে রাজ্য কাউন্সিলকে।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের আইনজীবী শৈবালেন্দু ভৌমিক এ দিন দাবি করেন, এমসিআই মোটেই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে ওই চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সুপারিশ করেনি। সারা দেশের ডাক্তারদের একটি তালিকা (‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল রেজিস্ট্রেশন’) থাকে। সেই তালিকা থেকে কয়েক বছরের জন্য তিন চিকিৎসকের নাম বাতিল করতে বলেছে এমসিআই। তা ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য কাউন্সিল কোনও অভিযোগের শুনানি না-করলে সেই নালিশ করতে হয় রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছ‌ে। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে বিচার না-পেলে স্বাস্থ্যসচিবের কাছে অভিযোগ জানানোর নিয়ম আছে। এ ক্ষেত্রে তা-ও করা হয়নি। এমনকী এমসিআই যে ওই অভিযোগের নিষ্পত্তির দায়িত্ব নিজেরা নিচ্ছে, সেটা তারা রাজ্য কাউন্সিলকে জানায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন