বিড়লা মিউজ়িয়াম একটা অদ্ভুত ধরনের বাদ্যযন্ত্র, এর তন্ত্রীতে ছোঁয়া লাগলেই এক অসাধারণ সুর বেজে ওঠে...’’ বলছিলেন ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজ়িয়ামসের প্রাক্তন ডিজি ইঙ্গিত মুখোপাধ্যায়, ‘‘এখানে প্রতিদিনই আসলে নতুন সৃষ্টির দিন।’’ মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় লন্ডন সায়েন্স মিউজ়িয়াম এবং মিউনিখের ডাচেস মিউজ়িয়াম দেখে এখানে এমন সংগ্রহশালা গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কথাটি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে পৌঁছলে শুরু হয় উদ্যোগ। ঘনশ্যাম দাস বিড়লা এ জন্য ১৮ স্টোর রোডের (বর্তমান ১৯ এ গুরুসদয় রোড) প্রাসাদোপম বাড়িটি উৎসর্গ করে দেন জাতির উদ্দেশে। এখানেই ১৯৫৯-এর ২ মে উদ্বোধন হয় দেশের প্রথম বিজ্ঞান সংগ্রহশালা, পরে যার নাম হয় বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহালয়। গত ২ মে ছিল তার হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠান। ছিল ‘রেমিনিসেন্স— সিক্সটি ইয়ার্স অব বিআইটিএম’ ও স্টিফেন হকিংকে নিয়ে ‘মাইন্ড ওভার ম্যাটার’ শিরোনামে দু’টি বিশেষ প্রদর্শনী এবং ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন ডিজিটাল গ্যালারির উদ্বোধন। অনুষ্ঠানে ছিলেন বিশিষ্ট জন। প্রকাশিত হল সংগ্রহশালার ইতিহাস এবং শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে দু’টি বই। সূচনা কথায় সরোজ ঘোষ ফিরে গেলেন শুরুর দিনে: ‘‘এক সময় এটি ছিল মাদার মিউজ়িয়াম আর এখন এটি হয়েছে গ্র্যান্ডমাদার মিউজ়িয়াম, কারণ চিরতরুণ এই সংগ্রহশালার অধীনে এখন আরও অনেক সংগ্রহশালা।’’ ১৯৬৫-তে দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ সংগ্রহশালা এবং জেলা সংগ্রহশালাগুলি তৈরির কাজ এখান থেকেই শুরু হয়েছিল। তার পর বিজ্ঞান প্রদর্শনী, কুইজ়, নাটক, হবি ক্লাব, হ্যাম রেডিয়ো, ইনোভেশন হাব, সামার ক্যাম্প— আরও কত কী। অমলেন্দু বসু ছিলেন প্রথম নির্দেশক। সরোজবাবু মনে করিয়ে দিলেন, ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতু দেখবার জন্য এখানেই সারা রাত জেগেছিল অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষ। তবে এখন কেন এই ধরনের ‘কমিউনিটি পার্টিসিপেশন’ হবে না সংগ্রহশালায়! একটি বাচ্চার জন্মদিনও তো পালন করা যেতে পারে বিজ্ঞান সংগ্রহশালায়। সময় বদলাচ্ছে, অতএব সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে মিউজ়িয়ামকেও বদলাতে হবে, বলেন তিনি। উপস্থিত সকলেই আগামীর শুভেচ্ছা জানিয়ে শতবর্ষের দিকে যাত্রার কথা বলেন।
শতবর্ষে
পূর্বাশ্রমে নাম ছিল সত্যকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। বাবা রামনারায়ণ ভাগবতের মহাপণ্ডিত, শ্রীচৈতন্য-পার্ষদ গদাধর পণ্ডিতের বংশধর। মা ননীবালার জন্ম অদ্বৈতাচার্যের বংশে। রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের পঞ্চদশ সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ (১৯১৯-২০১৭) উনিশ বছর বয়সে মন্ত্রদীক্ষা পান শ্রীরামকৃষ্ণ-পার্ষদ স্বামী বিজ্ঞানানন্দের কাছে। তিনিই সঙ্ঘের শেষ গুরু, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ কোনও পার্ষদের কাছে মন্ত্রদীক্ষিত। দেশ জুড়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, এ রাজ্যে পল্লিমঙ্গল কর্মসূচি, স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক বাড়ি অধিগ্রহণের মতো বিশাল বিশাল কর্মযজ্ঞ তাঁর দক্ষ পরিচালনায় সুসম্পন্ন হয়েছে। তাঁর স্মৃতি-সম্পদ, আধুনিক যুগ-ধর্ম, বরানগর মঠে কালীকৃষ্ণ, যুবমানসে স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি বই ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে সূত্রধর। এ বার তাদেরই প্রকাশনায় ১৮ মে স্বামী আত্মস্থানন্দের জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বেলুড় মঠে তাঁর ঈশ্বর-উপলব্ধির আনন্দ বইটির উদ্বোধন। ১৯৯৮-এর ২০ জুন আমেরিকার কানসাস শহরের বেদান্ত সোসাইটিতে প্রদত্ত ভাষণটিই গ্রন্থিত হল। সঙ্গের ছবিটি ১৯৯৬-এ তোলা, তিনি তখন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক।
চৈতন্য-চরিত
অসহিষ্ণুতা, ভেদাভেদ, হানাহানি, ধর্ম নিয়ে অধার্মিক কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে। এই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে সহিষ্ণু, ভাবাবেগে বিভোর, ত্যাগের প্রতীক শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর উপর প্রদর্শনী ‘চৈতন্য’-এর আয়োজন, বলছিলেন চিত্রকূট আর্ট গ্যালারি-র প্রকাশচন্দ্র কেজরীবাল। নন্দলাল বসু, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার, পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তী (সঙ্গের ছবি), বীরেন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্কর হালদার ছাড়াও অরূপ দাস, অনিন্দ্য রায়, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট ছবির সঙ্গে আর্লি বেঙ্গল ও নাম না জানা শিল্পীদের কাজ (মোট ২৩টি) নিয়ে দশ দিনের প্রদর্শনী। পশুপ্রেমে বিভোর, কৃষ্ণময় জগৎ, ভাব সাগরে ডুব, নগর কীর্তনে সঙ্গদান-সহ বিবিধ চিত্রে চৈতন্য চরিত। চলবে ২০ মে পর্যন্ত (৩-৮টা)।
আমরা নয়ছয়
‘আমরা নয়ছয়’— এখানে ‘নয়ছয়’-এর আভিধানিক অর্থ বিশৃঙ্খল-তছনছ-নষ্ট বা পণ্ড নয়, এর মানে ‘উই আর ফ্রম ১৯৯৬’— সরকারি আর্ট কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে পাশ করে বেরোনো ২৮ জন শিল্পীর সম্মিলিত প্রদর্শনীর শিরোনাম। শিল্পীদের মতে, বরং এই প্রদর্শনীর নামের একটা বিপরীত অর্থ করা যেতে পারে— সুশৃঙ্খল-পরিপাটি-ছিমছাম। কারণ, তাঁদের আঁকা শিল্পকলাগুলিও সে ভাবেই প্রদর্শিত হবে অ্যাকাডেমির সব ক’টি গ্যালারি জুড়ে (১৪-২০ মে, ১২-৮টা)। প্রদর্শিত হবে ১৭০টি ছবি। থাকবে বেশ কিছু ভাস্কর্য, সেরামিক ও টেক্সটাইলের কাজও।
বড়দি
আড়িয়াদহ সর্ব্বমঙ্গলা বালিকা বিদ্যালয় আমার ‘আত্মার শান্তি’— এই বীজমন্ত্রে দীক্ষিত বড়দি অপর্ণা মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি প্রয়াত হলেন। জন্ম ঢাকা জেলায়, পিতা মাখনলাল মুখোপাধ্যায় ও মা শৈলবালা দেবী। ৯১ অতিক্রান্ত অবিবাহিত জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে দক্ষিণেশ্বর আড়িয়াদহের বেষ্টনীতে। এলাকার মেয়েদের জন্য ১৯২১-এ স্থাপিত স্কুলের ভার তিনি ১৯৪৯-এ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৪১ বছর কেটেছে তাঁর সেই স্কুলকে এক উজ্জ্বল উচ্চতায় পৌঁছে দিতে। সত্তরের উত্তাল সময়ে দু’হাতে আগলে রেখেছিলেন প্রতিষ্ঠানকে। কঠিন ব্যক্তিত্ব, নীতিবোধ, আদর্শ, স্নেহ ও শিক্ষাদানের সুনিপুণ শিল্প তাঁকে দিয়েছিল সবার বড়দির সম্মান। তাই ১৯৮৬ সালে যখন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেলেন তখন সমগ্র এলাকার মানুষই যেন সম্মানিত হয়েছিলেন। পুরস্কারের পুরো অর্থই তিনি স্কুলে দান করে গিয়েছেন ছাত্রীদের পুরস্কার প্রদান প্রকল্পে। অবসর নেন ১৯৯০ সালে। মৃত্যুর আগে জানিয়ে যান মুখাগ্নি বা পারলৌকিক ক্রিয়ার কোনও প্রয়োজন নেই তাঁর। স্কুল ও প্রাক্তন ছাত্রীরা তাঁর স্মরণসভার আয়োজন করেছিল।
গভীর অসুখ
উষ্ণিকের নাট্যচর্চার ৩৫ বছর পূর্ণ হল। সেই উপলক্ষে ১৭ মে সন্ধে ৬:৩০-এ অ্যাকাডেমি মঞ্চে দেখা যাবে উষ্ণিক প্রযোজনা স্ট্রিন্ডবার্গের ‘দ্য ফাদার’ অবলম্বনে নাটক ‘বাবাই’। রূপান্তর ও নির্দেশনায় ঈশিতা মুখোপাধ্যায়। এই নাটকটি শুধু যে নারী-পুরুষের সম্পর্কের উপর লেখা বিশ্বের অন্যতম সেরা নাটক তাই নয়, বরং এ নাটক ইঙ্গিত করে ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ ও পরিবারে ঘনিয়ে আসা অবিশ্বাস ও সন্দেহের বাতাবরণের দিকে। এ নাটক আঙুল তোলে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের উপর মানুষের নির্বিচার আস্থা, মানুষের অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে। নায়ক এক যুক্তিবাদী বৈজ্ঞানিক। শেষ পর্যন্ত তিনি উন্মাদ হয়ে যান এবং তাঁর সব থেকে বড় আঘাত আসে স্ত্রীর কাছ থেকে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গল্প বলার মোড়কে এ নাটক আসলে বলে এক গভীর সামাজিক অসুখের কথা। বাংলা নাটকে এই প্রথম দেবশঙ্কর হালদার, ছন্দা চট্টোপাধ্যায় এবং শুভাশিস মুখোপাধ্যায় একই সঙ্গে অভিনয় করবেন।
কুড়ি বছরে
অশোকনগর নাট্যমুখ কুড়ি বছরে পড়ল! নিশ্চিত উৎসব হবে, জনসমাগম ঘটবে, বিনিময় হবে সংস্কৃতির। রবীন্দ্রনাথ মোহিত চট্টোপাধ্যায় থেকে ব্রাত্য বসুর নাটক নিয়ে নিরীক্ষা তাদের বরাবরই। তবু তাদের কুড়ির প্রকাশ শুরু হচ্ছে একটু ভিন্ন ভাবেই। মহাভারত নিয়ে নাটক লিখেছেন শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ— গান্ধারী। অনর্গল ব্যথার উদ্যাপন, যুদ্ধবাজদের প্রশ্ন, এক সন্তানহারা মায়ের উপলব্ধি। কঠিন অভিনয়, সঙ্গীতা চক্রবর্তী ঝুঁকি নিয়েছেন সেই কাজের। আর নাট্যনির্মাণে সম্মত সত্যব্রত রাউত, যিনি নাট্যমুখ-এই কাজ করে গিয়েছেন সিনোগ্রাফি নিয়ে, ২০১৬ সালে। তখন থেকেই ভাবনা ছিল যদি একটি প্রযোজনা-নির্মাণ কাছ থেকে দেখা যায় তাঁর— গান্ধারী-র নির্দেশক তিনিই। অশোকনগর নাট্যমুখ-এর নিজস্ব মহড়াকক্ষে চলবে এর মহড়া, সঙ্গে একটি কর্মশালা, ১৪-২০ মে। অভিনেতা এবং অভিনয় বিষয়ক এই কর্মশালা। সমগ্র পরিকল্পনা অভি চক্রবর্তীর। আর জুন মাসে শুরু হবে গান্ধারী-র অভিনয়, জানালেন অভি।
কবিতামেলা
কোনও শিল্পীর ছবি যখন প্রদর্শিত হয়, মূল সেই শিল্পকর্মটির কোনও দ্বিতীয় থাকে না। কোনও শিল্পরসিক তা সংগ্রহ করলে তাঁর কাছেই একক সৃষ্টিটি থেকে যায়। কবিতার ক্ষেত্রেও কি তেমন হতে পারে না? ১৫ মে দেবভাষার বই ও শিল্পের আবাসে (৯/২ ফার্ন রোড) শুরু হচ্ছে ‘দেবভাষা কবিতামেলা ২০১৯’। সেখানে ‘চিত্রলেখা’ প্রদর্শনীতে থাকছে কবিতার সঙ্গে ছাপাই ছবি— মনোপ্রিন্ট। কবিতাগুলি একবারই মুদ্রিত হচ্ছে, কবির কাব্যগ্রন্থেও তারা ঠাঁই পাবে না। এ ছাড়া থাকবে কবি তুষার চৌধুরীর আঁকা ছবির প্রদর্শনী ‘স্বপ্নলোকে কোথায় শিকারী’ (সঙ্গে তারই একটি)। ‘মুখচ্ছবি’ বিভাগে মণীন্দ্র গুপ্তের আঁকা ছবি, সীমিত সংস্করণ সেরিগ্রাফও থাকবে। প্রকাশিত হবে গণেশ হালুইয়ের কাব্যগ্রন্থ পক্ষীমারীর চর। প্রদর্শনী ২৪ মে পর্যন্ত, ২-৮:৩০ (১৯ বাদে)।
প্রতিবাদের অধিকার
গোটা দেশ এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের পরীক্ষায় ব্যস্ত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দেশে কি প্রকৃত গণতন্ত্র আছে? তাই গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে সরব কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ। রাষ্ট্র অবশ্য বসে থাকে না। দেশের নানা প্রান্তে সামাজিক ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা কালা আইন প্রয়োগ করে তাঁদের কারান্তরালে পাঠানোর প্রয়াস অব্যাহত থাকে। যেমন, সুধা ভরদ্বাজ, ভারাভারা রাও, গৌতম নওলাখা, সোমা সেন, মহেশ রাউত, সুরেন্দ্র গ্যাডগিল, অরুণ ফেরেরা— তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। আড়ালে থেকে যায় আরও অসংখ্য মুখ। গরিব, আদিবাসী, দলিত জনজাতি ও উপজাতির মানুষের হয়ে কথা বলার ‘অপরাধ’-এ এই মানুষদের গ্রেফতার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক কনভেনশনের আয়োজন করেছে ‘প্রতিবাদের অধিকার মঞ্চ’। আজ, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টেয়, মৌলালি যুব কেন্দ্রে।
মুখোমুখি
ছ’বছর ছাড়াছাড়ি বাবা আর মেয়ের, কোথাও যেন সম্পর্কের ক্ষয় ধরেছিল তাদের মধ্যে। আবার যখন তারা মুখোমুখি, তখন কি ধামাচাপা দেবে সম্পর্কের ফাটলটাকে, হাত বাড়াবে পরস্পরের দিকে? না কি আরও বেশি তিক্ততায় নিয়ে যাবে গোটা পরিস্থিতিকে... এমন এক জটিল বিন্যাসেই পঞ্চাশ মিনিটের ছবিটিকে বুনেছেন কঙ্কণা চক্রবর্তী। ‘অনুরূপ/ মিরর ইমেজ’ দেখানো হবে নন্দনে ১৮ মে বিকেল ৫টায়। নিউ ইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমির তালিমপ্রাপ্ত কঙ্কণার ঠাঁই এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে। স্বাধীন নিরীক্ষা তাঁর ছবি তৈরির অচ্ছেদ্য গ্রন্থি। ‘‘নতুন প্রতিভার সঙ্গে এ শহরের মানুষজনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই কাজ আমাদের।’’ উদ্যোক্তা ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ়ের পক্ষে জানালেন প্রেমেন্দ্র মজুমদার। অতুল কুলকার্নি আর সব্যসাচী চক্রবর্তী থাকবেন সে সন্ধ্যায়।
ঝাড়ু কথা
দেশবিদেশের নানা সংগ্রহশালায় লোকঐতিহ্যের বহু নিদর্শন সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু শুধু ‘ঝাড়ু’ নিয়ে কোনও সংগ্রহশালার কথা শুনেছেন কি? বোধ হয় না। রাজস্থানে জোধপুরের কাছে এক গ্রামে আছে এমনই এক আশ্চর্য সংগ্রহশালা। শুধু ঝাড়ুই ওদের ধ্যানজ্ঞান, লক্ষ্য তার মাধ্যমে দেশের পরম্পরাবাহিত জ্ঞানভাণ্ডারের পরিচয় তুলে ধরা, তাকে টিকিয়ে রাখা। ওদেরই উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘ঝাড়ু কথা’ নামে একটি তথ্যচিত্রও (নির্দেশনা নভরোজ় কনট্রাক্টর)। ১৮ মে আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালা দিবস উপলক্ষে ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কনফারেন্স হল-এ রুস্তম ভরুচা ছবি-সহ বলবেন এই নিয়েই— ‘গ্রাসরুটস মিউজ়িয়োলজি ইন দি ইন্ডিয়ান কনটেক্সট: দ্য মেকিং অব অর্না-ঝর্না: দ্য ডেজ়ার্ট মিউজ়িয়াম অব রাজস্থান’। দেখানো হবে ‘ঝাড়ু কথা’ তথ্যচিত্রটিও।
সংগ্রাহক
বাবা আজিজুল হকের দেখানো জাদু অবাক চোখে দেখত ছোট্ট সাকিল। বাবার শখ ছিল দেশলাই, চাবির রিং আর দেশবিদেশের টাকা-মুদ্রা জমানো। বাবার প্রভাব জাদুর মতোই কাজ করেছিল সাকিলের জীবনে। পরে নিজেও হয়ে ওঠেন প্রথম শ্রেণির সংগ্রাহক। আহসানুল সাকিল হকের জন্ম ১৯৬৯-এ ঢাকায়। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হন। পেশাগত ভাবে যুক্ত গ্রাফিক শিল্প এবং অন্দরসজ্জার কাজে। কিন্তু বাবার উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই সংগ্রহ করছেন দেশলাই। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক বার পুরো সংগ্রহ চুরি হয়ে যায়। আবার নতুন উদ্যমে শুরু ২০১২-য়। দেশলাইয়ের খোঁজে ঘুরেছেন বহু দেশ। এখন ওঁর সংগ্রহে রয়েছে ১২৮টি দেশের প্রায় সতেরো হাজার দেশলাই এবং লেবেল। ২০১৫ থেকে নিজে শুরু করেন দেশলাইয়ের নকশা করা, এ পর্যন্ত ১১৭টি নকশা করেছেন। বাংলাদেশে দেশলাই সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেছেন ২০১৭-য়। সে বছরেই তৈরি করেন বাংলাদেশ ম্যাচবক্স কালেক্টর্স ক্লাব। প্রতি বছর পালন করেন দেশলাইয়ের স্রষ্টা জন ওয়াকারের জন্মদিন, প্রকাশ পায় বিশেষ দিবসীয় খাম। ২০১২ থেকে বেরোচ্ছে ‘শখের মানুষ’ পত্রিকা। প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কালেক্টর্স ডিরেক্টরি। শখের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে আয়োজন করছেন বিশেষ প্রদর্শনী। সম্প্রতি ঘুরে গেলেন কলকাতায়। দেখা করলেন সংগ্রাহকদের সঙ্গে। জানিয়ে গেলেন, ‘‘সারা বিশ্বে ক্রমে স্তিমিত হয়ে আসছে এই মূল্যবান শিল্পটি। কিন্তু ভারত এখনও দেশলাইয়ের খনি! সে জন্যেই আমাকে আবার আসতে হবে এই শহরে। ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য। কারণ যত দিন বাঁচব, দেশলাইয়ের সঙ্গেই বাঁচব!’’