সুড়ঙ্গের মুখে বিকল মেট্রো

গত ২৭ ডিসেম্বর ময়দান স্টেশনে যে রেকটি বিকল হয়ে গিয়েছিল, এ দিন সেই একই রেকের একই কামরার একই জায়গায় ফের সমস্যা ধরা পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৯
Share:

ভোগান্তি: দমদম স্টেশনে মেট্রোর অপেক্ষায় যাত্রীদের ভিড়।

রং বুলিয়ে রূপটানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু মেরামতির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতে ভিতরের অসুখ যে সারেনি, ট্র্যাকে নেমে দৌড় শুরু করার এক সপ্তাহের মধ্যেই বুধবার দমদম স্টেশনে ফের তার প্রমাণ দিল মেট্রোর একটি এসি রেক। এ দিন বেলগাছিয়ার দিকে যাওয়ার সময়ে সুড়ঙ্গের মুখে ওই রেকটি বিকল হয়ে যায়। বিপত্তি খুব বড় আকার ধারণ না করলেও এ দিনের ঘটনায় মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

Advertisement

মেট্রো সূত্রের খবর, গত ২৭ ডিসেম্বর ময়দান স্টেশনে যে রেকটি বিকল হয়ে গিয়েছিল, এ দিন সেই একই রেকের একই কামরার একই জায়গায় ফের সমস্যা ধরা পড়ে। মেরামতির পরে গত বৃহস্পতিবার ওই রেকটি দৌড় শুরু করেছিল বলে খবর। তার আগে সেটি কয়েক দফা চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মেট্রোকর্তারা।

তবে এ দিনের ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের প্রশ্ন, বারংবার জেনেশুনেই কি তাঁদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিপত্তির কারণ সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এ দিনের ঘটনায় মেট্রোর চালক ও গার্ডের তৎপরতায় হাজার দেড়েক যাত্রীকে দ্রুত এবং অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা গেলেও ওই বিভ্রাটের জেরে ঘণ্টা দু’য়েকেরও বেশি সময় ধরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।

Advertisement

মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর একটা নাগাদ দমদম থেকে বেলগাছিয়া অভিমুখে রওনা দেয় এসি-১ রেকটি। ওই ট্রেনে হাজার দেড়েক যাত্রী ছিলেন বলে খবর। চলতে শুরু করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেলগাছিয়ায় সুড়ঙ্গে ঢোকার কিছু আগে ট্রেনটি আচমকা বিকল হয়ে যায়। চালক সব রকম চেষ্টা করেও ওই ট্রেন সচল করতে পারেননি। মেট্রো সূত্রে খবর, ওই ঘটনার জেরেই শর্ট সার্কিট হয়ে থার্ড রেলে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে আর ঝুঁকি নেননি চালক। মিনিট কয়েকের মধ্যেই চালক এবং মোটরম্যান যাত্রীদের জানান, তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করার চেষ্টা হচ্ছে। সমস্যার কথা কন্ট্রোল রুমকেও জানানো হয়।

কামরায় আলোর অভাব না থাকলেও এসি বন্ধ থাকায় যাত্রীরা তখন দরদর করে ঘামতে শুরু করেছেন। থার্ড রেলে যে বিদ্যুৎ নেই, চালক এবং মোটরম্যান সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ট্রেনের দু’প্রান্তে ‘আর্থিং ক্লিপ’ লাগান বলে খবর। যাতে কোনও ভাবে ভুলক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়ে গেলেও সাবস্টেশনে আপনা থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে দুপুর দেড়টা নাগাদ মেট্রো কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ভাবে জানান, থার্ড রেলের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করা হয়েছে। ট্রেন যাতে বেলগাছিয়ার দিকে গড়িয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চাকায় ‘অ্যান্টি-স্কিড ব্লক’ লাগানো হয়।

তত ক্ষণে যাত্রীদের কোচের বাইরে বার করে আনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। মেট্রোর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। এর পরে মোটরম্যানের কেবিনের দরজা খুলে যাত্রীদের একে একে বার করে লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে দমদম স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। এর জন্য যাত্রীদের বেলগাছিয়া সংলগ্ন সুড়ঙ্গ থেকে প্রায় ৭০০ মিটার হাঁটতে হয়। যার জেরে দু’জন যাত্রী কিছুটা অসুস্থ বোধ করলেও বাকিরা সুস্থই ছিলেন বলে খবর। ওই দু’জনকে স্টেশনে প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর পরে পৌনে তিনটে নাগাদ বিকল রেকটিকে মেরামতির জন্য নোয়াপাড়া কারশেডে নিয়ে যাওয়া হয়। মেট্রোর এই বিভ্রাটের জেরে বিভিন্ন স্টেশনে ভিড় জমে যায়। দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ মেট্রো কর্তৃপক্ষ গিরিশ পার্ক থেকে কবি সুভাষের মধ্যে ট্রেন চালানো শুরু করেন। কিন্তু ওই পরিষেবা অনিয়মিত হওয়ায় যাত্রীদের অনেকেই চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন। এ দিনের ঘটনায় উদ্ধার পাওয়া এক যাত্রীকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘এমন করে মেট্রো চালায় কেন? মাঝপথে যখন তখন ট্রেন থেমে যাবে! কেউ কিছুই জানবে না?’’

মেট্রোর আধিকারিকদের মতে, সুড়ঙ্গের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটলে ফের এক দফা চরম বিপত্তির মুখে পড়তে হত। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুপুর একটা নাগাদ বেলগাছিয়ায় সুড়ঙ্গের কিছুটা দূরে ট্রেনটি থেমে যায়। পরে যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। কেন ওই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন