নিধন: মুরারিপুকুর এলাকায় বেলেঘাটা খালে ছড়ানো হচ্ছে মশা মারার ওষুধ। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মশা মারতে হলে ব্লিচিং দিয়ে কোনও লাভ নেই। রাস্তাঘাটে ধোঁয়া দিয়েও ডেঙ্গিবাহী মশা দমন করা যায় না। এ প্রচার পুরসভারই। লিফলেট ছড়িয়ে, হোর্ডিং-ব্যানার টাঙিয়ে শহর জুড়ে তা ঢালাও ভাবে বলা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মশা দমনে ছড়ানো হল ব্লিচিং পাউডার। এলাকার কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। পাড়ার একটি ক্লাব নিজে থেকেই ওই কাজ করছিল। আমি তাদের বলেছি, ব্লিচিং ছড়িয়ে মশা দমন করা যায় না।’’ তিনি জানান, যাঁরা সেই কাজ করেছেন, তাঁরা নিজেদের স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের অনুগত বলেও দাবি করেছেন। আর মন্ত্রী সাধনবাবুর বক্তব্য, ‘‘এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ছেলেরা কাজ করছে।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এ শহরে সরকারি হিসেবেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১১ জন। যার মধ্যে জনা পঞ্চাশই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করে এনএস-১ পজিটিভ মিলেছে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘সারা শহরে এ বার ওই ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ওই এলাকার ক্যানাল ইস্ট রোডে একটি বহুতলের নির্মাণ চলছে। সেখানকার জমা জলেই ডেঙ্গির মশা জন্মাচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। আপাতত সেই নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে নোটিস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খালের জলে সপ্তাহে দু’দিন করে মশা মারার ওষুধ ছড়ানো হচ্ছে।’’ ওই বহুতলের নির্মাণ সংস্থার এক প্রতিনিধি জানান, পুরসভার নোটিস পেয়ে তাঁরাও নির্মাণস্থলে মশা দমনের কাজ করছেন। মশার ওষুধ স্প্রে করেছেন। উল্টোডাঙা থানা সংলগ্ন এলাকায় আরও এক জনের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে সোমবার। তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্তের পরিবারের অভিযোগ, বাড়ির সামনেই লরির স্ট্যান্ড। সেখানে জমা জলেই মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।
বর্ষার মরসুমে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তায় পুরকর্তারা। মশা দমনের কাজ কেমন চলছে, তা দেখতে এ দিন আচমকাই উত্তর কলকাতার কয়েকটি বরোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির হন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য)। নিয়ম হল, কর্মীদের হাজির হতে হবে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে। কিন্তু এক নম্বর বরোয় গিয়ে তিনি দেখেন, এগজিকিউটিভ হেল্থ অফিসার নিজেই অনুপস্থিত। ১১টা নাগাদ ওই অফিসার আসতেই তাঁকে ধমক দেন অতীনবাবু। ওই অফিসার জানান, তিনি এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাই দেরি হয়েছে। তাঁকে বলা হয়, আরও সকালে এলাকায় যান। তিনি দফতরের প্রধান। তিনি সময়ে না এলে অন্যেরা কী শিখবেন?
এর পরে তিন এবং চার নম্বর বরোর স্বাস্থ্য অফিসেও যান অতীনবাবু। সেখানে অবশ্য হাজিরা নিয়ে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে খালি পড়ে থাকা জায়গায় মশার বংশবৃদ্ধি চিন্তায় ফেলেছে পুরসভাকে। অতীনবাবু বলেন, ‘‘খালি জায়গায় জঞ্জাল তো জমছেই। বৃষ্টির জলও জমে থাকছে। অনেক জায়গায় ক্লাব রয়েছে। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে দখল করে রয়েছেন। পুর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জায়গা যাঁরই হোক, যিনি বা যাঁরা তা দখল করে রেখেছেন, তাঁদের নোটিস দেওয়া হবে। মশা দমনে সচেতন না হলে পুর আইনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
একই সঙ্গে তিনি জানান, এ বার পুজো কমিটিগুলির মধ্যে ডেঙ্গি সচেতনতায় সেরা কে, তার প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে। কলকাতাকে সাতটি এলাকায় ভাগ করা হবে। প্রতিটি এলাকা থেকে একটি করে পুজো কমিটি নিজেদের ওয়ার্ডে মশা দমন ও ডেঙ্গি সচেতনতার জন্য পুরস্কার পাবে। পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক, পতঙ্গবিদ ও ডেঙ্গি বিশেষজ্ঞ বিচারক হিসেবে থাকবেন।