লরির অভাবে বন্ধ রাতে গাড়ি ধরার অভিযান

রাতে বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে গত জুন মাস থেকে অভিযান শুরু করেছিল পুরসভা। রাতের শহরে বেআইনি ভাবে রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ির চাকায় আটকাতে ছোট-বড়-মাঝারি আকৃতির শ’খানেক ক্ল্যাম্পও কেনা হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৫
Share:

এমন ক্ল্যাম্পই আটকানো হয় বেআইনি ভাবে রাখা গাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

গাড়ি নেই। তাই গাড়ি ধরার অভিযানও আপাতত বন্ধ!

Advertisement

রাতে বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে গত জুন মাস থেকে অভিযান শুরু করেছিল পুরসভা। রাতের শহরে বেআইনি ভাবে রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ির চাকায় আটকাতে ছোট-বড়-মাঝারি আকৃতির শ’খানেক ক্ল্যাম্পও কেনা হয়েছে। জুন মাস থেকে দু’দফায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা বাবদ পুরসভার আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ টাকা। কিন্তু আপাতত সেই অভিযান বন্ধ হয়ে রয়েছে। কারণ, গাড়ির চাকায় লাগানোর ক্ল্যাম্প বয়ে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি নেই। এমনটাই পুরসভা সূত্রের খবর!

পুরসভার পার্কিং দফতর সূত্রের খবর, তাদের নিজস্ব যে গাড়ি রয়েছে, তাতে ওই ক্ল্যাম্প বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ক্ল্যাম্পগুলি বয়ে নিয়ে যেতে ছোট লরির প্রয়োজন, যা তাদের নেই। এত দিন তবু অন্য দফতরের কাছ থেকে লরি চেয়ে কাজ চালানো হত। কখনও জঞ্জাল সাফাই দফতর তো কখনও উদ্যান দফতরের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে তাতেই ক্ল্যাম্প নিয়ে যাওয়া হত। তার পরে বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা হত। কিন্তু অভিযান চালাতে গেলে অন্তত দু’দিনের জন্য লরি দরকার বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকেরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের নিজস্ব কাজকর্ম থাকায় অনেক সময়েই লরি পেতে অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। আর তাতেই আপাতত বন্ধ অভিযান।

Advertisement

পার্কিং দফতরের নিজস্ব লরি কেনার জন্য সম্প্রতি একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। কারণ, আরও ৫০টি নতুন ক্ল্যাম্প কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। ফলে ১৫০টি ক্ল্যাম্প কীসে বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, আপাতত তা নিয়েই চিন্তাভাবনা চলছে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ক্ল্যাম্প নিয়ে যাওয়ার জন্য পার্কিং দফতরের নিজস্ব লরি নেই। দফতরের যে গাড়ি রয়েছে, তাতে ক্ল্যাম্প বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নিজস্ব ছোট লরি না থাকলে রাতে ধারাবাহিক অভিযান চালানোটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে দফতরের নিজস্ব গাড়ি কেনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’

যদিও পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, লরির অভাবের জন্য অভিযান যে বন্ধ রয়েছে, ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। মাসিক ৪০০ টাকার বিনিময়ে পুরসভা যে রাতে গাড়ির সামনে গাড়ি রাখার অনুমতি দেয়, সেটা অনেকেই জানেন না। নাগরিকদের সুবিধার্থে আপাতত সেটাই ব্যাপক ভাবে প্রচার করতে চাইছে পুরসভা। শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলিতে লাগানোর জন্য এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও তৈরি করা হয়েছে। তাই আপাতত ওই অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে খুব দ্রুতই তৃতীয় দফার অভিযানে নামা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার অবশ্য অভিযান বন্ধ রাখার পিছনে ঠান্ডার যুক্তি দিয়েছেন। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘গাড়ি কেনার বিষয় নয়। ঠান্ডা পড়েছিল বলে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। আবার তা শুরু করা হবে।’’ প্রসঙ্গত, প্রথম দফায় গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর ও পরের দফায় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর, দু’দফায় মোট ৯৪৭ জন গাড়িমালিকের বিরুদ্ধে ‘কেস’ দিয়েছে পুরসভা। হাজার টাকা জরিমানা বাবদ মোট ৯ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা আদায়ও করা হয়েছে।

এমনিতে রাতের অভিযানে বেরিয়ে হাজারো ঝামেলার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। গাড়ির চাকায় ক্ল্যাম্প লাগাতে গিয়ে পুরকর্মীদের পাল্টা প্রশ্ন শুনতে হয়েছে, ‘‘আমার বাড়ির সামনে গাড়ি রেখেছি। তাতে অসুবিধাটা কোথায়?’’ কখনও আবার ক্ল্যাম্প ভেঙে গাড়ি নিয়ে চালক পালিয়ে গিয়েছেন। তখন সংশ্লিষ্ট থানায় গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুরসভা। এ পর্যন্ত ক্ল্যাম্প নিয়ে পালানোর ১২টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানান আধিকারিকেরা। ওই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চালককে হাজার টাকা জরিমানা তো দিতেই হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ল্যাম্প নষ্ট বাবদ ক্ল্যাম্পের টাকাও দিতে হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন