‘কলকাতা মডেল’ এ বার নিউ টাউনে।
নির্দিষ্ট কয়েকটি মাপকাঠির ভিত্তিতে আপনার সম্পত্তির কর নির্ধারণ করুন আপনি নিজেই— কলকাতা পুরসভার এই নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে ১ এপ্রিল। সেই পথে এ বার নিউ টাউন এলাকাতেও ঘরবাড়ির মূল্যায়ন হবে। এ জন্য রাজ্য সরকারের ভ্যালুয়েশন বোর্ডের পক্ষ থেকে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এনকেডিএ-কে খসড়া রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভ্যালুয়েশন বোর্ডের এক কর্তা জানিয়েছেন, যে পদ্ধতিতে আয়কর রির্টান হয়, সেই ভাবেই সম্পত্তি কর নির্ধারণ হবে। নিউ টাউন এলাকাতেই বাণিজ্যিক বাড়ি ও বহুতলের সংখ্যা বেশি। তাই কর নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থায় সরকারের রাজস্ব আদায়ও আগের থেকে বেশি হবে।
নিজের কর নিজে ঠিক করুন— এই পদ্ধতি চালু করতে কলকাতা পুর এলাকার ১৪৪টি ওয়ার্ডকে আটটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাজারদর অনুযায়ী এক-একটি জোনে করের হার ঠিক করে দিয়েছে পুরসভা। সেই মাপকাঠির ভিত্তিতে কোনও বাড়ির মালিক নিজেই নিজের সম্পত্তির মূল্যায়ন করে কর নির্ধারণ করে ফেলতে পারবেন।
নিউ টাউনেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সংস্থার এক পদস্থ আধিকারির জানান, নিউ টাউন এলাকাকে এ থেকে জি — এই সাতটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যেই রয়েছে ৩৩টি ব্লক। এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের কাছে যে খসড়া রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তিকরের হার সব চেয়ে বেশি এ জোনে। বছরে বর্গফুট পিছু ১৭ টাকা। সব চেয়ে কম জি জোনে। বর্গফুট প্রতি পাঁচ টাকা।
কেন এই পার্থক্য?
এনকেডিএ-র এক কর্তা জানিয়েছেন, খসড়ায় এ জোনের মধ্যে থাকছে নিউ টাউনের ‘সেন্ট্রাল বিজনেস’ এলাকা। এখানেই সব চেয়ে বেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি আবাসন রয়েছে। এই জোনে রাস্তা অনেক চওড়া, যাতায়াতের সুবিধাও বেশি। বাস স্ট্যান্ড, শপিং মল, বাজার রয়েছে এই জোনে। তার পরেই বি জোন। খসড়া অনুযায়ী, বি জোন ‘সাব সেন্ট্রাল বিজনেস’ এলাকা বলে পরিচিত। এই জোনে তুলনামূলক ভাবে কম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর রয়েছে বড় বড় মল, বেসরকারি সংস্থার অফিস। খসড়া মোতাবেক সি, ডি, ই এবং এফ জোনে রয়েছে শুধুই বসত বাড়ি ও আবাসন। কিছু ছোট ছোট দোকানপাট রয়েছে এখানে। আর জি জোন-কে গরিবের বসতি-এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই কর্তার বক্তব্য, এলাকাগত পার্থক্য, পরিষেবা ও পরিকাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট জায়গার বাজারদর মেনেই বর্গফুট পিছু কর ঠিক করা হয়েছে।
সল্টলেকের লাগোয়া নিউ টাউন। সল্টলেকে ২২ হাজার প্লট রয়েছে। তার মধ্যে পার্ক, ব্যক্তিগত মালিকানায় জমি, বাজার, বেসরকারি এবং সরকারি ভবন সবই রয়েছে। নিউ টাউনের আয়তন সল্টলেকের আড়াই গুণ। এখানে নির্মাণ শিল্পের রমরমা। পুর দফতরের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে নিউ টাউনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। সমস্ত কাজ শেষ হলে নিউ টাউনে বসবাস করবেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ।
কারা এই সম্পত্তি কর নির্ধারণ করলেন? পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভ্যালুয়েশন বোর্ডের চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে চার সদস্যের কমিটি তৈরি হয়েছিল। কমিটিতে এনকেডিএর আধিকারিক ছাড়াও ছিলেন বিশেষজ্ঞেরা।
সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন কর-ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।