‘বয়সের ভারে’ বন্ধ হওয়ার পথে পুর পেট্রল পাম্প

হাতিবাগান, রাজাবাজার, ধাপা, পামারবাজার, মৌলালি এবং গড়াগাছায় পুরসভার নিজস্ব ছ’টি পেট্রল পাম্প রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলকাতা পুরসভার পেট্রল পাম্পগুলিতে অধিকাংশ কর্মীই বয়স্ক। বয়সের কারণে তেল দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনটাই বলছে পুরসভার নথি। এমন টানাপড়েনে পড়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের তেল-নীতিতেই পরিবর্তন করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। সূত্রের খবর, পুরসভার ছ’টি পাম্প বন্ধ হতে চলেছে। সেগুলি চালানোর দায়িত্ব অন্য সংস্থাকে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুর প্রশাসনের বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

Advertisement

হাতিবাগান, রাজাবাজার, ধাপা, পামারবাজার, মৌলালি এবং গড়াগাছায় পুরসভার নিজস্ব ছ’টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। পুরসভার নিজস্ব গাড়ি, বাস, ডাম্পার, লরি ছাড়াও বাইরে থেকে ভাড়া করা যে প্রায় সাড়ে চারশো গাড়ি রয়েছে, সেগুলি সবই এই ছ’টি পাম্প থেকে পেট্রল বা ডিজেল সংগ্রহ করে। এই ছ’টি পেট্রল পাম্পে যে স্টোরকিপারেরা রয়েছেন, তাঁরা পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার। তা ছাড়াও সেখানে পাম্প অপারেটর হিসেবে কাজ করেন স্টোর অ্যাটেন্ডেন্টরা। ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের গড় বয়স ৫৫-৫৯ বছর। পেট্রল পাম্পে তেল দেওয়া বা তার রসিদ ঠিক করে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে ওই বয়স্ক কর্মীদের উপরে পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না পুর কর্তৃপক্ষ।

যদিও পুর-হিসেব বলছে, শেষ চারটি অর্থবর্ষে পেট্রল-ডিজেল বাবদ যা বরাদ্দ ধরা হয়েছিল, খরচ তার মধ্যেই হয়েছে। যেমন ২০১৪-’১৫ সালে পেট্রল ও ডিজেল মিলিয়ে পুরসভার খরচ হয়েছিল প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ২০১৫-’১৬ সালে খরচ হয়েছিল ২৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। ২০১৬-’১৭ সালে খরচ হয়েছিল সাড়ে ২৭ কোটি টাকা। ২০১৭-’১৮ সালে সেই খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। খুচরো বিক্রির থেকে একসাথে প্রচুর পরিমাণে কিনলে ক্রয়মূল্যে (বাল্ক কনজিউমার রেট) একটা ছাড় পাওয়া যায়, তাই পেট্রল ও ডিজেলের ক্ষেত্রে পুরসভার অর্থ সাশ্রয়ও হয়েছে। যেমন ২০১৭-’১৮ সালে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ ৫২০ টাকা সাশ্রয় করেছে পুরসভা।

Advertisement

কিন্তু তার পরেও পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন?

পুরসভা সূত্রের খবর, পুর-নথি স্পষ্ট জানাচ্ছে, ‘পাম্প অপারেটরদের বয়সের কারণে সব সময়েই দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। যার ফলে সম্পত্তি তো বটেই, প্রাণহানিও হতে পারে।’ শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ দিন নতুন নিয়োগ না করার ফলে পেট্রল পাম্পগুলিতে কর্মীর অভাবও রয়েছে। ফলে সকালে যখন জঞ্জাল সাফাইয়ের গাড়িগুলি কাজে বেরোনোর আগে তেল ভরতে যায়, তখন সংশ্লিষ্ট পাম্পগুলিতে লম্বা লাইন পড়ে। ফলে সামগ্রিক ভাবে শহরের জঞ্জাল সাফাইয়ের গতিও শ্লথ হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা।

তাই প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, রিটেল আউটলেট তৈরির জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড, ভারত পেট্রোলিয়াম লিমিটেড-সহ তেল সংস্থাগুলির কাছে আবেদন করবে পুরসভা। ওই আউটলেটগুলি থেকেই যাতে পুরসভার গাড়ি তেল নিতে পারে, সে বিষয়টি দেখা হবে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘২০১৪ সাল নাগাদ একবার এ প্রস্তাব উঠলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি শেষ পর্যন্ত। তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে তো আর পাম্প চালানো যায় না! পুর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই এ ব্যাপারে

এগোনো হচ্ছে।’’ তবে এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই পুর প্রশাসনের অভ্যন্তরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গত সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল চর্চা হয়েছে আধিকারিকদের মধ্যে।

প্রসঙ্গত, পেট্রোল পাম্পগুলি রয়েছে পুরসভার সাপ্লাই দফতরের অধীনে। ওই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ তারক সিংহ অবশ্য জানাচ্ছেন, এটা ঠিক বন্ধ নয়। শুধু পেট্রল পাম্প চালানোর দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা ভাবা হচ্ছে। তারকবাবুর কথায়, ‘‘আমরা নিজেরা আর পেট্রল পাম্প চালাতে চাইছি না। অন্য সংস্থার হাতে সেগুলি তুলে দিতে চাইছি যাতে তারাই চালায়। তবে তার জন্য পুরসভার কোনও কর্মীরই চাকরি যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন