জাহাজের প্রতিকৃতি। হেরিটেজ সেন্টার মিউজিয়ামে। নিজস্ব চিত্র
বন্দরে ক্যাশ ক্লার্কের পদে চাকরি করতেন উত্তমকুমার। ১৯৪৭ সালের ১৯ অগস্ট এক হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি।
উত্তমকুমারের ছবি-সহ বাঁধানো ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন এক মধ্যবয়সী। আরও এক ব্যক্তি পাশে এসে দাঁড়াতেই বললেন, ‘‘এটাই তো দারুণ। এটা দিয়েই দর্শকদের ইতিহাস বলা শুরু করব ভাবছি।’’ ওই ব্যক্তি সম্মতি দিয়ে জানালেন, বিষয়টি তাঁর চোখেই পড়েনি। তিনিও উত্তমকুমার দিয়েই শুরু করতে চান।
শনিবার বন্দরের ফেয়ারলি ওয়্যারহাউসের মেরিটাইম হেরিটেজ সেন্টারে এভাবেই বন্দর এবং শহর কলকাতার ইতিহাস ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন রাজ্য সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত জনাদশেক ট্যুর গাইড। কারণ, শনিবার থেকেই ‘বন্দর হেরিটেজ ট্যুর’ শুরু করলেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। হেরিটেজ সেন্টারের মিউজিয়ামের পাশাপাশি, উৎসাহী দর্শকদের দেখানো হবে বন্দরের একাধিক ঐতিহাসিক জায়গা। এই হেরিটেজ যাত্রায় থাকছে গঙ্গা-পাড়ের একাধিক ঘাটের ইতিহাস, বিএনআর হাউস, ওল্ডেস্ট মেরিন ওয়ার্কশপ এবং ইনডেনচার মেমোরিয়ালের (১৮৩৪ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে জলপথে বিদেশে পাড়ি দেওয়া চুক্তিভিত্তিক ভারতীয় শ্রমিকদের স্মৃতিতে তৈরি) বিখ্যাত ক্লক-টাওয়ারও।
বন্দরের হেরিটেজ কোঅর্ডিনেটর গৌতম চক্রবর্তী জানান, এখন সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দর্শকদের হেরিটেজ সেন্টারের মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এবার থেকে প্রতি শনিবার এই হেরিটেজ সফরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘বন্দর ছাড়া কলকাতার ইতিহাস ভাবা সম্ভব নয়। দুইয়ের ইতিহাসকে তুলে ধরতেই এই ট্যুরের পরিকল্পনা। জল থেকে শহর কলকাতাকে দেখার সুযোগ করে দেবে এই ট্যুর।’’
এই হেরিটেজ যাত্রায় ‘মেরিটাইম হেরিটেজ সেন্টার’ দেখানোর পর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হবে প্রিন্সেপ ঘাটে। সেখানকার ঐতিহাসিক ম্যান অব ওয়ার জেটি থেকে ‘সিল্যান্ড’ স্টিমারে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে গঙ্গাবক্ষে। হাওড়া ব্রিজ পার করে খিদিরপুর ডক পর্যন্ত গঙ্গাভ্রমণের পর ফিরে আসার পথে একে একে জানানো হবে ঘাটের ইতিহাস।
বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া চোখের সামনে দেখার সুযোগও থাকছে এই হেরিটেজ যাত্রায়। ভারতীয়, ভুটানি এবং নেপালিদের জন্য মাথাপিছু খরচ পড়বে ১,৩৯৯ টাকা। বিদেশিদের দিতে হবে ২,৪৯৯ টাকা।