কিষেণলাল যাদব
দশ বছর আগে গড়িয়াহাটের একটি আবাসন থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক প্রৌঢ়ার রক্তাক্ত দেহ। সেই ঘটনায় এক দশক জেল খাটার পরে বেকসুর খালাস হলেন মূল অভিযুক্ত।
শুক্রবার আলিপুরের ১৭ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক শুভাশিস ঘোষাল ওই ঘটনায় পুলিশের তথ্যপ্রমাণ খারিজ করে অভিযুক্ত কিষেণলাল যাদবকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন। কিষেণের দুই আইনজীবী শুভময় সমাদ্দার এবং কোয়েল মোদক জানান, বিচার চলাকালীন এক সাক্ষীর বয়ানে কিছু অসঙ্গতি মেলে। সেই সঙ্গে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে না পারায় আদালত তাঁকে বেকসুর মুক্তি দিয়েছে। বিনা অপরাধে এক দশক কারাগারে কাটিয়ে মুক্তি পাওয়ার পরে আদালত চত্বরে নিজের আইনজীবীদের ধন্যবাদ দেন কিষেণ।
লালবাজার অবশ্য জানিয়েছে, তারা নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করবে। মামলার সরকারি কৌঁসুলি তিমিরবরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘটনায় ৩১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু রায়ের সময়ে বিচারক এক জনের সাক্ষ্যকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ২০০৮ সালের ১৬ মার্চ গড়িয়াহাট থানার ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সে একটি আবাসনের চতুর্থ তল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সেখানকার বাসিন্দা ঊষা চোখানিকে (৫৪)। ঊষাদেবীর দেহে ধারালো কোনও বস্তুর প্রায় ২৬টি আঘাত ছিল। বিবাহ-বিচ্ছিন্না ওই মহিলা ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। ওই দিন দুপুরে ফোনে সাড়া না পেয়ে ঊষাদেবীর বোন এসে দিদিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন। গড়িয়াহাট থানার পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। ঘটনার তদন্তভার নেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিল ঊষাদেবীর পরিচারক কিষেণ। বিহারের বাঁকা জেলার বাসিন্দা কিষেণ ঘটনার দশ দিন আগে কাজে ঢুকেছিলেন। তদন্তে নেমে প্রায় দশ মাস পরে বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। তার পর থেকে জেলেই ছিলেন কিষেণ। খুনের ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালে আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। তার পরে ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলার শুনানি চলেছে।
এ দিন রায়ের পরে অভিযুক্তের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘তথ্যপ্রমাণের অভাবে কিষেণকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণে ফাঁক ছিল বলেও উল্লেখ করেছে আদালত। পুলিশ এমন কোনও সাক্ষী বা প্রমাণ নিম্ন আদালতে পেশ করতে পারেনি, যা থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়, কিছু লাভের জন্যই ঊষাদেবীকে খুন করেছেন কিষেণ।’’ এ দিন বিকেলেই প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বেরিয়ে কিষেণ জানান, সবার আগে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। তার পরে পরিবারের বাকিদের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান।