বৃদ্ধাকে তুলে এনেও সাহায্য পেতে নাকাল

মধ্যমগ্রামের বসুনগরের বাসিন্দা অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় পেশায় লেখক। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার যশোর রোড ধরে নিজের বইয়ের প্রকাশনার কাজে যাচ্ছিলেন তিনি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:০৬
Share:

এই অবস্থাতেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন অরণ্য। —নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করতে গিয়ে দিনভর ভোগান্তি হল এক যুবকের। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে রাত ২টো পর্যন্ত বৃদ্ধাকে নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ালেন তিনি। পথচলতি মানুষেরা তো ফিরে তাকালেনই না, সে ভাবে সাহায্যে এগিয়ে এল না পুলিশও! এমনকী ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দিল না হাসপাতালও। তবে রাতের দিকে কিছুটা ‘সদয়’ হয় পুলিশ। বৃদ্ধার দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে রাখা হয় থানার মেঝেয়!

Advertisement

মধ্যমগ্রামের বসুনগরের বাসিন্দা অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় পেশায় লেখক। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার যশোর রোড ধরে নিজের বইয়ের প্রকাশনার কাজে যাচ্ছিলেন তিনি। চলন্ত বাস থেকেই দেখেন, বিমানবন্দরেরর কাছে রাস্তার ডিভাইডারে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা। তখনই বাস থেকে নেমে পড়েন অরণ্য। বললেন, ‘‘সামনে গিয়ে দেখি, শরীরে প্রায় কোনও পোশাক নেই। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। পাশের দোকান থেকে জল এনে দিই।’’

এর পরে বৃদ্ধার ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করেন বলে জানান অরণ্য। ভাত খেয়ে বৃদ্ধা একটু সুস্থ বোধ করলেও, তাঁর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। কথাও বলছেন অসংলগ্ন। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেন অরণ্য। অভিযোগ, এই গোটা পর্বে কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশকে ফোন করলাম। পুলিশ বলল, আপনি নিজেই নিয়ে যান, কাজ হয়ে যাবে।’’ বৃদ্ধাকে ফুটপাতে বসিয়ে নাগেরবাজারের কাছে একটি পুলিশ কিয়স্কে গিয়ে কথা বলেন অরণ্য। তাঁকে পাঠানো হয় দমদম কামারডাঙা ফাঁড়িতে। অরণ্যের অভিযোগ, ‘‘ওখানকার পুলিশও প্রথমে সাহায্য করেনি। বহু তর্কাতর্কির পরে অটোয় করে, এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে আমার সঙ্গে পাঠায় ঘটনাস্থলে। পরে এক সার্জেন্টও আসেন। তবে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার নাম করে তাঁরা চলে যান। আর ফেরেননি।’’

Advertisement

উপায় না দেখে এর পরে রাস্তায় টহলরত একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড় করিয়ে সব জানান অরণ্য। তাঁদের কথামতো একটি ট্যাক্সিতে করে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজিকরে। সঙ্গে যায় পুলিশের গাড়িটিও।

তবে অভিযোগ, হাসপাতাল ওই বৃদ্ধাকে ভর্তি নেয়নি। অরণ্যের দাবি, ‘‘চিকিৎসকেরা বলেন, এই মহিলা সুস্থ। ভর্তি নেওয়া যাবে না। অথচ, তখনও তিনি রীতিমতো ধুঁকছেন!’’ হাসপাতাল ফিরিয়ে দিলে টহলদার গাড়ির পুলিশকর্মীরাও অরণ্য এবং বৃদ্ধাকে ছেড়ে চলে যান। ‘‘ওঁরা বলেন, এ বার আপনি বুঝুন। আমরা আর জানি না।’’, বললেন অরণ্য।

অরণ্য জানান, রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত আরজিকর হাসপাতালেই বৃদ্ধাকে নিয়ে বসে থাকেন তিনি। সেখানে অনেক বার প্রশ্ন করার পরে অরণ্যকে বৃদ্ধা জানান, তাঁর নাম মালা দত্ত। দাবি করেন, বাড়ি থেকে মাথা ফাটিয়ে বার করে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ইতিমধ্যে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে সাহায্য চান অরণ্য। তা দেখে রাতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অরণ্যর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সংগঠনের সদস্যেরা এবং অরণ্য ঠিক করেন, নিজেদের উদ্যোগেই দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে বৃদ্ধাকে ভর্তি করবেন তাঁরা।

তবে সেখানে যাওয়ার আগে আরও এক বার কামার়ডাঙা ফাঁড়িতে যান অরণ্য। অরণ্যের দাবি, পুলিশ ফের বলে, তাদের কিছু করার নেই। হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু অরণ্য জানান, তিনি শুধু হাসপাতাল নয়, পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করবেন। এর পরে অবশ্য মহিলাকে রাতের জন্য আশ্রয় দিতে রাজি হয় পুলিশ। তার পরেও বহু টালবাহানার পরে, শেষমেশ রাত দু’টো নাগাদ ব্যারাকপুর মহিলা থানায় বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অরণ্যর অভিযোগ, বৃদ্ধাকে দেখে ‘নোংরা’ বলে নাক সিঁটকোন সেখানকার পুলিশ। দুর্ব্যবহারও করেন। থাকতে দেন একটি ঘরের মেঝেতে। পুলিশ জানায়, শুক্রবার ওই বৃদ্ধাকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক পাভলভ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অরণ্য জানান, অত রাতে ব্যারাকপুর থানায় পৌঁছনোর পরেও তাঁকে বলা হয়, ওই বৃদ্ধার সঙ্গে থেকে যেতে। অরণ্যর কথায়, ‘‘প্রথমেই পুলিশের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। তা না হওয়ায় সারা দিন ছুটলাম আমি। তার পরেও আমায় রাতে থেকে যেতে বলেছে। কারও পাশে দাঁড়াতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি!’’

যদিও হাসপাতালের উপর দোষ চাপিয়ে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘আমরা বৃদ্ধার পাশে থেকেছি। হাসপাতাল এ ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে না। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ওই বৃদ্ধার নামে কোথাও কোনও নিখোঁজ-ডায়েরি হয়েছে কি না, তারও খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন