প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে খুন ব্যবসায়ী

শনিবার ভোরে এ ভাবেই খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হল খড়দহ থানার পানিহাটিতে ইমারতি দ্রব্যের এক ব্যবসায়ীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

সঞ্জয় সিংহ। —নিজস্ব চিত্র

ভোরে পটকা ফাটার মতো শব্দ শুনে রাস্তার ধারের বাড়ির বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, গঙ্গার ঘাটে কোনও পুজো হচ্ছে। কিন্তু পরপর ওই শব্দ শুনে জানলা খুলে বা বারান্দায় এসে বাসিন্দারা যা দেখলেন, তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক যুবককে ঘিরে গুলি চালিয়ে বাইকে চেপে বেরিয়ে গেল কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা তিন যুবক!

Advertisement

শনিবার ভোরে এ ভাবেই খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হল খড়দহ থানার পানিহাটিতে ইমারতি দ্রব্যের এক ব্যবসায়ীকে। পুলিশ জানায়, সঞ্জয় সিংহ (৩৮) নামের ওই ব্যবসায়ীকে প্রাতর্ভ্রমণ করার সময়েই খুন করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ব্যবসা সংক্রান্ত পুরনো শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা। কারণ, গত অগস্টে সঞ্জয়ের এক অংশীদার অনির্বাণ দাস ওরফে বাবনকেও গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল এলাকারই আর এক ব্যবসায়ী মুকেশ সাউয়ের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পর থেকে মুকেশ এলাকা ছাড়া বলে দাবি পুলিশের।

তদন্তকারীদের সন্দেহ, ফের এলাকায় ঢোকার চেষ্টায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে সঞ্জয়কে খুন করিয়েছেন মুকেশ। ওই যুবক যে প্রতিদিন এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণ করেন, সেটাও জানত দুষ্কৃতীরা। তবে মুকেশ নিজেই এ কাজ করেছেন, নাকি তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ এই খুন করেছে, তা-ও খতিয়ে দেখছে খড়দহ থানার পুলিশ। কারণ, সঞ্জয় ও বাবনের নামে আগে খুন ও গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সুখচর রাজা বস্তির হরিশচন্দ্র দত্ত রোডের বাসিন্দা সঞ্জয় দীর্ঘ দিন ধরেই ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায় যুক্ত। অবিবাহিত ওই যুবক প্রতিদিনের মতো এ দিনও ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তাঁর দাদা বিজয়বাবু জানান, প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েও পাঁচ মিনিট পরেই ফের বাড়ি ফিরে এসেছিলেন সঞ্জয়। কোনও পাওনাদারকে টাকা দেওয়ার জন্য কয়েক হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়ে যান। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, প্রতি দিনের মতো এ দিনও হরিশচন্দ্র দত্ত রোড ধরে হাঁটছিলেন ওই যুবক। সঙ্গে স্থানীয় এক যুবক ছিলেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, গঙ্গার ঘাটের কাছে বারো মন্দির এলাকায় বটতলা শনি মন্দিরের দিকে যাওয়ার সময়েই আচমকা সঞ্জয়দের লক্ষ করে গুলি করা হয়। তবে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ভয়ে ওই ব্যবসায়ী ও স্থানীয় যুবক দু’দিকে দৌড়তে শুরু করেন। সঞ্জয় ছুটে বটতলার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর পিছনে একটি মোটরবাইকে চেপে তিন যুবক ধাওয়া করে। মুখ বাঁধা ও হাতে বন্দুক ধরা সেই যুবকেরা সঞ্জয়কে লক্ষ করে ফের গুলি চালায়। একটি গুলি তাঁর বাঁ হাতে ঢুকে যায়। বটতলার কাছে মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে ঘিরে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। একটি বুকে ও কপালের দু’দিকে গুলি ঢুকে যায়। এর পরে বাইক নিয়ে বস্তির হরিশচন্দ্র দত্ত রোড ধরে বিটি রোডের দিকে চলে যায় ওই তিন জন। বলরাম বসু হাসপাতালে সঞ্জয়কে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

এ দিন বটতলায় গিয়ে দেখা গেল, মন্দিরের সামনেই রাস্তায় রক্তের দাগ। ইট দিয়ে তা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ওই ব্যবসায়ীর মা মায়াদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। যুবকের এক দূর সম্পর্কের কাকা বিকাশবাবু বলেন, ‘‘রোজের মতো বেরোলো, কিন্তু কী যে হল, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন