পুরসভার সাফাইকর্মী থেকে হয়ে গেল ভাড়াটে খুনি!

রশিদ কৈখালির চিড়িয়াবাগানের ওই বাড়িতে সাফাইয়ের কাজের পাশাপাশি সুপ্রতিমের মেরুদণ্ডের সমস্যার জন্য তাকে মালিশও করে দিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৩:১৮
Share:

নিহত শম্পা দাস।

ছিল পুরসভার সাফাইকর্মী। হয়ে গেল ভাড়াটে খুনি! বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, সিভিক ভলান্টিয়ার শম্পা দাসের খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী সুপ্রতিম দাস দাবি করেছে, স্ত্রীর ‘অত্যাচারে’ অতিষ্ঠ হয়ে এক সময়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল সে। তখনই পরিচিত সাফাইকর্মী রশিদ আলি মোল্লার কাছে নিজের সেই অবস্থার কথা প্রকাশ করে সুপ্রতিম তার পরামর্শ চেয়েছিল। সব শুনে সাত-পাঁচ না ভেবেই শম্পাকে খুনের কথা বলে ফেলেছিল রশিদ। সেটাই তার কাল হল!

Advertisement

রশিদ কৈখালির চিড়িয়াবাগানের ওই বাড়িতে সাফাইয়ের কাজের পাশাপাশি সুপ্রতিমের মেরুদণ্ডের সমস্যার জন্য তাকে মালিশও করে দিত। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ৩৬ বছরের শম্পাকে খুনের পিছনে বাড়ির মালিকানা নিয়ে বিবাদের পাশাপাশি স্বামী ও শাশুড়িকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনও ছিল অন্যতম কারণ। কমিশনারেট সূত্রের খবর, সুপ্রতিম জেরায় দাবি করেছে, রশিদের সামনেও শম্পা তাকে মারধর করতেন। ওই বা়ড়ির অনেক অশান্তির সাক্ষী রশিদ। যার প্রেক্ষিতে সুপ্রতিমের প্রতি সহানুভূতি ছিল তার। এরই মধ্যে এক দিন কথায় কথায় স্ত্রীর হাত থেকে কী ভাবে মুক্তি পাবে, তা রশিদের কাছে জানতে চায় সুপ্রতিম। কারণ, শম্পা বিবাহবিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না। সুপ্রতিমের দাবি, বিবাহবিচ্ছেদের কথা বললে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেত। পুলিশকর্মী স্ত্রী বধূ নির্যাতনের মামলা করার হুমকিও দিতেন বলে অভিযোগ।

চিড়িয়াবাগানের বাড়ির পঞ্চাশ শতাংশ স্ত্রীর নামে এবং বাকি অংশ ছেলের নামে দিয়ে গিয়েছিলেন সুপ্রতিমের বাবা। পুলিশ জানায়, স্ত্রীর আচরণে অতিষ্ঠ সুপ্রতিমের আশঙ্কা ছিল, তার ভাগের মালিকানা চাপ দিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নিতে পারেন শম্পা। তাই নিজের অংশের মালিকানা মায়ের নামে লিখে দিয়েছিল সুপ্রতিম!

Advertisement

তদন্তকারীদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া সুপ্রতিম রশিদের কাছে পরামর্শ চাইতেই সে বলেছিল, ‘‘খুন করে দাও।’’ যা শুনে সুপ্রতিম বলে, ‘‘তা হলে তা-ই করে দে!’’ এর পরে শম্পাকে সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথম দফায় ৬০ হাজার টাকা নেয় রশিদ। পুলিশ সূত্রের খবর, একবারে সেই টাকা নেয়নি
রশিদ। যখনই খুনের কথা উঠত, তখনই কিছু টাকা হাতিয়ে নিত সে। টাকা নিয়েও কাজ না করায় এক সময়ে রশিদকে সুপ্রতিম বলে, কাজ না করলে তার স্ত্রীকে খুন করার জন্য যে রশিদ টাকা নিয়েছে, পুলিশকে তা বলে দেবে। টাকা ফেরত দেওয়া রশিদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। শেষমেশ আরও টাকার বিনিময়ে হাফিজুল মোল্লা এবং নীরজ সাউয়ের সাহায্যে গত শুক্রবার রাতে শম্পাকে খুন করে রশিদ। সেই টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছিল শম্পার শাশুড়ি।

কমিশনারেট সূত্রে খবর, স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনার জন্য কোনও অনুশোচনা সুপ্রতিমের মধ্যে দেখতে পাননি তদন্তকারীরা। শাশুড়িও ভাবলেশহীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন