সিন্ডিকেটে ত্রস্ত বিদেশি সংস্থাও

বছর দেড়েক আগে পশ্চিম বন্দর থানার পি-৬৬ কার্ল মার্কস সরণির ঠিকানায় সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থা কার্গো কন্টেনার রাখার শেড তৈরির জন্য কলকাতা বন্দরের কাছ থেকে ৩৫ হাজার বর্গমিটার জমি লিজ নেয়।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২০
Share:

সিন্ডিকেটের দাপটে কলকাতা বন্দরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল এক বিদেশি সংস্থা। পুলিশি পাহারায় কাজ শুরু করাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

Advertisement

বছর দেড়েক আগে পশ্চিম বন্দর থানার পি-৬৬ কার্ল মার্কস সরণির ঠিকানায় সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থা কার্গো কন্টেনার রাখার শেড তৈরির জন্য কলকাতা বন্দরের কাছ থেকে ৩৫ হাজার বর্গমিটার জমি লিজ নেয়। তার পরে পুরসভা থেকে নকশা-সহ প্রয়োজনীয় অনুমোদনও নেয়। স্থানীয় ঠিকাদার মারফত কাজও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মাস ছয়েক পরেই স্থানীয় সিন্ডিকেট কাজ বন্ধ করার শাসানি দেওয়া শুরু করে বলে অভিযোগ। ভয় পেয়ে স্থানীয় ঠিকাদারও কাজ বন্ধ করে দেন। থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু পুলিশের তরফে কোনও হেলদোল ছিল না বলে অভিযোগ।

ওই বিদেশি সংস্থার অভিযোগ, কাজ যাতে পুনরায় চালু করা না যায়, তার জন্য জমিটি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে পুলিশের কাছে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সংস্থার কলকাতা অফিসের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই জমি বন্দর কর্তৃপক্ষের। সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে। আমাদের সিঙ্গাপুরের সদর দফতর বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেয়।’’ ওই আধিকারিক জানান, সম্প্রতি কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সেখানে সব কাগজপত্রও দেখানো হয়। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আসে। তার পরেই নড়ে বসে লালবাজার। বন্দর এলাকার পুলিশকর্তাদের লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়। বলা হয়, অবিলম্বে ওই প্রকল্পের কাজ শুরুর ব্যবস্থা করতে।

Advertisement

বন্দর এলাকার এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ওই সংস্থাকে লিখিত ভাবে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। এমনকী, পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দিন-রাত ওই এলাকায় পুলিশ ভ্যান টহলও দিচ্ছে।’’

লালবাজার ও বন্দর এলাকার পুলিশকর্তারা জানান, রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর অনুগামীরাই ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছিল। ওই মন্ত্রীকেও একাধিক বার অনুগামীদের সামলাতে অনুরোধ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই বিদেশি সংস্থার আধিকারিকেরা। এমনকী, ওই সংস্থা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে জানানোর পরে সেখানকার অফিসারেরাও ওই মন্ত্রীকে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। তা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের দাপট কমেনি। অভিযোগ, ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের জাল রসিদ দেখিয়ে বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য চাপ দিতে থাকে সিন্ডিকেটের লোকজন।

বন্দর এলাকার এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বন্দরের ওই জমিতে এক তৃণমূল নেতার নজর ছিল। ওই নেতাকে সেই মন্ত্রীর সঙ্গেই দেখা যায়। ওই জমিটি সিঙ্গাপুরের সংস্থা লিজ নেওয়ায় সেখানে ওই নেতার বেআইনি পার্কিং তৈরির মতলব ভেস্তে যায়। তাই তাদের উৎখাত করার এই চেষ্টা।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের এক কর্তা জানান, রাজ্যে লগ্নির জন্য বিদেশে দরবার করছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ, সিন্ডিকেটের দাপটে কলকাতায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদেশি প্রকল্প। এমন হলে তো বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে বিরূপ বার্তা পৌঁছবে। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতোই কাজ হয়েছে।’’ এলাকার বিধায়ক তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। ওখানে ঠিকাদার ও স্থানীয় কিছু লোকের মধ্যে সমস্যা হয়েছিল বলে শুনেছি। আবার কাজ শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন