লাঠি ভুলে স্মার্টফোনে ভরসার তালিম প্রবীণদের

শিক্ষকদের মধ্যে বন দফতরের ৫০ ছুঁই ছুঁই আধিকারিক লিপিকা রায় থেকে একুশের তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সাম্যব্রত সরকার।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:২৩
Share:

হাঁটুর বয়সী ‘দিদিমণি’র কাছে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করা শিখছেন ৯৩ বছরের ছাত্র রতীশ ভট্টাচার্য। বন্ধুকে ইংরেজিতে ‘তুমি কোথায়?’ লিখেই প্রবীণ চোখজোড়ায় খুশির ঝিলিক ফুটে উঠল।

Advertisement

শিক্ষয়িত্রী অনিকেতা ঘোষ মেরেকেটে ২৪ বছরের। সল্টলেকবাসী রতীশবাবু বিপত্নীক। ছেলে আমেরিকায়, মেয়ে খড়্গপুরবাসী। অশক্ত বার্ধক্যে লাঠির বদলে স্মার্টফোনটাই ভরসা এখন।

রয়েছেন আরও একঝাঁক ৬৫, ৭০ বা ৭৫। রবিবার দুপুরে ময়দানের একটি তাঁবুতে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ডাকে সকলের ‘স্মার্ট’ হওয়ার সাধনা চলল। উদ্যোক্তাদের তরফে অমিতাভ দে সরকার, তাপস বিশ্বাসেরা সহাস্যে বোঝালেন, ঘাবড়াবেন না, যন্ত্র কখনওই মানুষের থেকে বেশি স্মার্ট হতে পারে না!

Advertisement

নিঃসঙ্গ জীবন আনন্দময় করতে বেশ কয়েক বছর আগেই বুড়োবুড়িদের কম্পিউটার শেখানোর প্রকল্প শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক। সে-প্রকল্পে কিছুটা ভাটার টান এখন। তবে দিল্লির মোদী সরকার প্রবীণদের অনলাইন লেনদেনের খুঁটিনাটি শেখাতে তৎপর। আজকের জীবনচর্যায় অত্যাবশ্যক বয়স্কদের স্মার্টফোন শিক্ষার প্রক্রিয়ায় কিন্তু খামতি রয়ে গিয়েছে। অশোকনগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেই খামতি ভরাট করতেই এগিয়ে এসেছে। প্রধানত ফেসবুক মারফত নাম লিখিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকদের মধ্যে বন দফতরের ৫০ ছুঁই ছুঁই আধিকারিক লিপিকা রায় থেকে একুশের তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সাম্যব্রত সরকার।
৭৫-এর মায়া মিত্র, ৬৮-র দিদিভাই বসু, ৬৬-র রমেন মণ্ডলেরা তাঁদের কাছে অ্যাপ-ক্যাব বুক করা বা ইউটিউবে গান শোনার খুঁটিনাটি শিখলেন। রমেনবাবুর হাতে শিক্ষার ফর্দ। ফোনের ওয়ালপেপার পাল্টানো, ডেস্কটপ পরিষ্কার, পিডিএফ পড়া কিংবা তমুক অ্যাপ বসানোর ফরমায়েশ। ছেলে-বউমাকে বার বার বিরক্ত করতে কুণ্ঠিত মায়াদেবী, স্বাবলম্বী হতে চান। দমদমের শ্যামশ্রী কুণ্ডু মুম্বইয়ে নাতির জামাও অনলাইন কেনেন। তবু আরও সড়গড় হতে এসেছেন।

জনা ৪০ শিক্ষার্থীকে তিন-চার জনের দলে ভাগ করে শেখালেন ব্যস্ত তরুণ শিক্ষকেরা। ঘণ্টা দুয়েকের ক্লাস শেষে তাঁরা বললেন, টুকটাক শেখার দরকারে যোগাযোগ থাকবে। শিক্ষার্থীদের আবদার, অনলাইন কেনাকাটা কী ভাবে করতে হয়, শেখাতে শিগগির এক দিন ফের বসা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন