ভাটা এলেই দক্ষিণেশ্বরে জেগে উঠছে চর

এমনিতেই দক্ষিণেশ্বর আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় প্রতি দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মন্দিরে প্রচুর ভিড় হয়। আর সেই মন্দিরের সামনের গঙ্গার চর এখন ‘অ্যাডভেঞ্চার’-এর জায়গা হয়ে উঠেছে দর্শনার্থী থেকে পর্যটকদের কাছে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৬
Share:

গঙ্গাবক্ষে: ভাটার সময় এমন ভাবেই মাথা তুলছে চর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ভাটা হলেই জেগে ওঠে চর। অল্পবিস্তর জায়গা জুড়ে নয়। তার ব্যাপ্তি প্রায় মাঝগঙ্গা পর্যন্ত।

Advertisement

বেশ কয়েক মাস ধরে ভাটার সময় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে গঙ্গায় চর দেখা যাচ্ছে। জল সরে গিয়ে পলি, বালির ওই চর মাথা তুলে থাকছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। পরে আবার জোয়ারের জলে ডুবে যাচ্ছে চর।

এমনিতেই দক্ষিণেশ্বর আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় প্রতি দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মন্দিরে প্রচুর ভিড় হয়। আর সেই মন্দিরের সামনের গঙ্গার চর এখন ‘অ্যাডভেঞ্চার’-এর জায়গা হয়ে উঠেছে দর্শনার্থী থেকে পর্যটকদের কাছে। গোড়ালি ডোবা জলের মধ্যে হেঁটে অনায়াসেই প্রায় মাঝগঙ্গায় পৌঁছে যাচ্ছেন অনেকে। পিছনে মন্দির কিংবা বালি ব্রিজকে রেখে ঝটপট সেলফি তুলে অনেকে আবার তা স্যোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিচ্ছেন। মন্দিরে ঘুরতে আসার পাশাপাশি এখন অনেকেই চর দেখতে ভাটার সময় এসে হাজির হচ্ছেন দক্ষিণেশ্বরে।

Advertisement

কিন্তু সাধারণ চোখে এই চর নতুন দ্রষ্টব্য স্থান কিংবা সেখানে হেঁটে চলে বেড়ানো যতই রোমহর্ষক হয়ে উঠুক না কেন, এর ফলে প্রকারান্তরে ক্ষতি হচ্ছে বলেই মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এমন ‘মগ্ন চর’ বেশি মাত্রায় দেখা দিলে নৌ পরিবহণ, পানীয় জল, নদীর জীব বৈচিত্রে সমস্যা বাড়বে। তবে দক্ষিণেশ্বরের এই চর কয়েক মাস ধরে বেশি মাত্রায় দেখা গেলেও তা নতুন নয় বলেই জানাচ্ছেন নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে সাগর পর্যন্ত এমন ১৪টি ‘মগ্ন চর’ রয়েছে। যেগুলি সব সময় দেখা যায় না। তবে আগে কম দেখা গেলেও এখন শুখা মরসুম হওয়ায় বেশি দেখা যাচ্ছে।’’

কেন বাড়ছে চর?

• নির্দিষ্ট হিসেব না থাকায় উজানের রাজ্যগুলি বেশি জল নিয়ে নিচ্ছে

• ভাগীরথীর উপনদী (অজয়, ময়ূরাক্ষী, দামোদর, রূপনারায়ণ) এবং শাখানদীর (জলঙ্গী, চূর্ণি) জল শুকিয়ে গিয়েছে

• জোয়ারের জল ৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে ৮ ঘণ্টা ধরে ধীরে ফেরার সময় পলি ফেলে যায়

• উজানের মিষ্টি জল আর সাগরের নোনতা জল মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পলি জমাট বাঁধে

• দক্ষিণে জাহাজের পথের জন্য পোর্ট ট্রাস্ট ড্রেজিং করে, কিন্তু উজানে ড্রেজিং হয় না

তিনি জানান, মে মাস থেকে হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করলে ফের গঙ্গায় জল বাড়বে। কল্যাণবাবুর মতে, ‘‘উজানের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও বিহার বেশি সেচের জল টেনে নেওয়ায় গঙ্গায় জল আরও কমে যাচ্ছে।’’ আবার ৫০০ কিলোমিটার লম্বা ভাগীরথীর নীচের দিকে দক্ষিণে ২৮০ কিমি অংশে জোয়ার ভাটা খেলে নবদ্বীপ পর্যন্ত। ফলে উজানের জল কমছে। ভাটার জল উত্তর দিকে ঠেলে এগোচ্ছে। আর জোয়ারের জল যেটা ঢুকছে তাতে অনেক পলি থাকে বলেও জানাচ্ছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে দেখা গেল গঙ্গার ঘাটে ও নদীর তীরে রীতিমতো ঘড়ির কাঁটায় চোখ রেখে অপেক্ষা করছেন অনেক দর্শনার্থী, পর্যটক। ভাটার সময় আসতেই তাঁদের হইহই রব উঠছে। জল কমতেই জিন্‌স গুটিয়ে চরে নেমে পড়লেন কয়েকজন। তাঁদের একজন দেবনাথ দাস বলেন, ‘‘এক বন্ধুর ফেসবুকে ছবিটা দেখেছিলাম। এর পরে সকলে মিলে ঠিক করি চরে হাঁটবো। মাঝ গঙ্গা পর্যন্ত হাঁটার ইচ্ছা রয়েছে। কত ক্ষণ ভাটা থাকবে সেই সময়ও দেখে নিয়েছি।’’ দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা ঝন্টু পালের কথায়, ‘‘চর আছে জানি। তা বলে বালি ব্রিজের নিচে মাঝ গঙ্গা পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যাবে এমন চর দেখিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন