green jackfruit

ভাগাড়ের মাংসের ভয়, ভরসা গাছপাঁঠা!

ভয় কাটাতে তাই তপনবাবুর দাওয়াই গাছপাঁঠা। তিনি জানাচ্ছেন, হোটেলের প্রতিদিন খেতে আসা ব্যক্তিরাও ইদানিং মাংসের গুণাগুণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

নতুনত্ব: গাছপাঁঠার প্রচারে হোটেলের পোস্টার। ফড়িয়াপুকুরে। ছবি: সুমন বল্লভ

ভাগাড়ের মাংসের খবরে রীতিমতো আতঙ্কে শহরবাসী। রাস্তার ধারের ছোট-বড় হোটেলের আমিষ মেনুকে এখন সন্দেহের চোখে দেখছে মানুষ। এই পরিস্থিতিতে হোটেল মালিকের ‘ত্রাতা’ হয়ে দেখা দিচ্ছে নিরামিষ গাছপাঁঠা!

Advertisement

সম্প্রতি হাতিবাগান বাজারে ঢুকে দু’তিনটে মাংসের দোকান ঘুরে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন হোটেল-মালিক তপন ঘোষাল। দেখেন, এক এঁচোড় বিক্রেতা চেঁচিয়ে চলেছেন, ‘‘ভাগাড়ের পচা পাঁঠা নয়, গাছপাঁঠা খান। নিরাপদ নিরামিষ!’’ ভাবনাচিন্তার পরে সেদিন ব্যাগভর্তি গাছপাঁঠা কিনে বাড়ি ফিরেছিলেন তপনবাবু।

তার পরেই তপনবাবুর প্রিয়া হোটেলের প্রধান মেনু হয়ে উঠেছে গাছপাঁঠা। ফড়িয়াপুকুর এলাকায় তাঁর ভাতের হোটেলে গাছপাঁঠার প্রচারে কয়েকটি পোস্টারও লাগিয়েছেন ইতিমধ্যেই। পোস্টারে লেখা সেই এঁচোড় বিক্রেতার বুলি— ‘নিরাপদ নিরামিষ। গাছপাঁঠার মাংস। স্পেশাল মেনু।’

Advertisement

তপনবাবু জানাচ্ছেন, ভাগাড়-পর্বে নতুন এই মেনু চেটেপুটে খাচ্ছেন লোকজন। তাঁর কথায়, ‘‘সকলের মনেই ভয় রয়েছে। চারদিকে ভাগা়ড়ের মাংস নিয়ে যা চলছে, তাতে হোটেলের ব্যবসা চালানো যাবে না। তাই অন্যরকম ভাবতেই হল। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকেই তো শুনছি এঁচোড় গাছপাঁঠা। ভাল করে রান্না করলে মাংসের মতোই খেতে লাগে।’’

সম্প্রতি বজবজের ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে বলে শোরগোল শুরু হয়। ট্যাংরা, কাঁকিনাড়া, কল্যাণী, টালিগঞ্জ এবং ধাপার মাংসও একই ভাবে শহরের বিভিন্ন হোটেলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কলকাতা পুলিশ এবং পুরসভা তদন্তে নেমে জানতে পারে যে, ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা মাংস টুকরো করে প্যাকেটে ভরা হত। তার পরে হিমঘরে সংরক্ষণ করা থাকত সেই মাংস। পরে তা পৌঁছে যেত বাজারে। এমতাবস্থায় হোটেলের খাবার নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই।

ভয় কাটাতে তাই তপনবাবুর দাওয়াই গাছপাঁঠা। তিনি জানাচ্ছেন, হোটেলের প্রতিদিন খেতে আসা ব্যক্তিরাও ইদানিং মাংসের গুণাগুণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন। ফলে দোকানে মাংসের পদ একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। তপনবাবুর কথায়, ‘‘আমার হোটেলে এখন ১৪ রকমের মাছ পাবেন। সঙ্গে বেশ কয়েকটি ভাল নিরামিষ পদ। নিজের হাতে প্রতিদিন বাজার করি। খারাপ খাওয়ানোর প্রশ্নই নেই।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের বিরুদ্ধে এককালে ভোটে দাঁড়ানো তপনবাবুর দাবি, ‘‘মানুষের বিশ্বাস কী ভাবে ধরে রাখতে হয় জানি। তাই এখন হিট গাছপাঁঠা।’’

হোটেলে বসে চেটেপুটে এঁচোড়ের নতুন পদ খেয়ে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘আগে সপ্তাহে তিন দিন মাংস খেতাম। এখন ভয়ে খাচ্ছি না। এঁচোড়টা খারাপ লাগল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন