পূর্ব বড়িশা প্রাথমিক স্কুলে অভিভাবকদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ তাঁর পিসি, কেউ মামা ও তো কেউ কাকা— রাজ্যের মন্ত্রী থেকে বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে তাঁর নাকি এ রকমই সম্পর্ক। আর এত দিন এই সম্পর্ককে ব্যবহার করেই তিনি নাকি স্বেচ্ছাচার চালাচ্ছিলেন স্কুলে। যাচ্ছেতাই আচরণ করতেন স্কুলের পড়ুয়া ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে। ধার ধারতেন না স্কুলের কোনও নিয়মকানুনেরই। এই সব অভিযোগ নিয়ে, সোমবার সকালে ওই শিক্ষিকার বদলি চেয়ে স্কুলে বিক্ষোভ দেখান একদল অভিভাবক। ঘটনাটি খাস কলকাতার কৈলাস ঘোষ রোডের পূর্ব বড়িশা প্রাথমিক স্কুলের।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার নাম তুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রাথমিক স্কুলেরই তিনি এক জন শিক্ষিকা। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ স্কুলের গেটে তালা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকেরা। তাতে ভিতরে আটকে পড়েন ওই শিক্ষিকা সহ আরও অনেকে। পরে পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে।
এই ঘটনার খবর জানার পর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ইতিমধ্যেই স্কুলে আসার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আপাতত স্কুলে আসতে পারবেন না ওই শিক্ষিকা। খতিয়ে দেখা হবে তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগগুলো। তার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ।
আরও খবর: ‘রাত বাড়লে দেখা মেলে না পুলিশের’
ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
অভিভাবক এবং শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্যের কয়েক জন মন্ত্রী এবং বিধানসভার স্পিকারের আত্মীয় বলে তুতুল নিজেকে জাহির করতেন। এবং সেই সমস্ত মন্ত্রীদের দোহাই দিয়ে তিনি স্কুলে ভীষণ বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। ক্লাস নিতেন না, সময়ে স্কুলে আসতেন না, বিনা কারণে পড়ুয়াদের মারধর করতেন, প্রধান শিক্ষিকাকে না জানিয়ে যখন তখন ছুটি নিয়ে নেন। এই নিয়ে তাঁকে কিছু বলারও উপায় ছিল না স্কুল কর্তৃপক্ষের। কিছু বলতে গেলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের পিসি, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের মামা এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিজের কাকা বলে পরিচয় দিয়ে কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিতেন। ওই শিক্ষিকার দুর্ব্যবহারে স্কুলের ছাত্র সংখ্যাও ক্রমে কমে যাচ্ছিল। এমনই অভিযোগ অভিভাবকদের। টানা আড়াই মাস ছুটিতে থাকার পর এ দিন স্কুলে যোগ দেন ওই শিক্ষিকা। এর পরই অভিভাবকেরা বিক্ষোভ দেখান।
ওই প্রাথমিক স্কুল সূত্রে খবর, তাঁর দুর্ব্যবহারের কারণে এর আগেও ওই শিক্ষিকাকে মুচলেখা দেওয়া হয়েছিল। তিনি স্কুলের রীতি-নিয়ম মেনে চলবেন, এই মর্মে মুচলেখা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও তিনি বদলাননি।
ওই শিক্ষিকা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ এ দিন অস্বীকার করেছেন। তিনি মন্ত্রী, স্পিকারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথাও এ দিন উড়িয়ে দিয়েছেন।