বাধা: নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর পথে সমস্যা এই হলদিরাম উড়ালপুলই। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে
বিকল্প পথ যা-ই হোক, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের জন্য হলদিরাম উড়ালপুল ভেঙে ফেলা ছাড়া গতি নেই। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই দফতরের আধিকারিকদের কাছে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের পক্ষ থেকে বিকল্প পথের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেখানেই উড়ালপুল ভাঙার পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে।
তবে, এখনও বিষয়টি প্রস্তাব আকারে রয়েছে। কিছুই চূড়ান্ত নয়।
চিনার পার্কের পরে ভিআইপি রোডে প্রস্তাবিত নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো রেল প্রকল্প কোথায় মাটি স্পর্শ করবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপড়েন চলছে। সেই সমস্যা মেটাতেই গত ২০ এপ্রিল রেলের তরফে নতুন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবে দু’টি বিকল্প যাত্রাপথের কথা বলা হয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, দু’টি ক্ষেত্রেই উড়ালপুল ভাঙার কথা বলেছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবে তার কারণও অবশ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আগে ঠিক ছিল, সল্টলেকের ধাঁচে হলদিরাম উড়ালপুল লাগোয়া এলাকায় মাটির উপরে ভিআইপি রোড স্টেশন তৈরি হবে। এর পরে র্যাম্প বেয়ে ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এএআই) কলোনির কাছে পাতালপ্রবেশ হবে মেট্রো রেলের। সেই পরিকল্পনায় বদল এনে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের এখন পর্যবেক্ষণ হল, এএআই কলোনির কাছে মেট্রো রেলের পাতালে অবতরণ ঘটলে ভিআইপি রোড অনেকখানি সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। কলকাতা থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য ভিআইপি রোডের ওই অংশই একমাত্র রাস্তা। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে চাইছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তাবিত দু’টি নতুন বিকল্প যাত্রাপথ কী? পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, ট্রেনের সুড়ঙ্গে ঢোকার জন্য যে র্যাম্প তৈরি হবে, তা অনুপমা আবাসন এবং হজ হাউস সংলগ্ন ফাঁকা জমির মধ্যবর্তী অংশে করা যায়। হজ হাউসের পরে ৪৫ মিটার অতিক্রম করে সুড়ঙ্গে ঢুকে যাবে মেট্রো। সে ক্ষেত্রে মাটির নীচে ভিআইপি রোড স্টেশন হবে ইন্দ্রপ্রস্থ কমপ্লেক্স ও পুলম্যান কমপ্লেক্সের মধ্যবর্তী অংশে। দ্বিতীয় বিকল্পে র্যাম্পের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা হল হলদিরাম বিল্ডিং থেকে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মধ্যবর্তী অংশ। সে ক্ষেত্রে মাটির তলায় ভিআইপি রোড স্টেশনের পরিধি হবে হজ হাউস থেকে কৈখালি মোড় পর্যন্ত।
এই দুই বিকল্পের কথা বলে হলদিরাম উড়ালপুল ভাঙার উল্লেখ রয়েছে মেট্রো রেলের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, প্রয়োজনে মাটির উপরে মেট্রো রেলের যাত্রাপথের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নতুন উড়ালপুল নির্মাণের কথা বলেছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
উড়ালপুল ভাঙা কেন জরুরি, তার ব্যাখ্যায় মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেতুর মতো যে কাঠামোর (ভায়াডাক্ট) উপর দিয়ে মাটির উপরে মেট্রো রেল চলবে, তা হলদিরাম উড়ালপুলের পরেই ভিআইপি রোড স্পর্শ করছে। ভিআইপি রোড যাতে সঙ্কুচিত না হয়, তার জন্য কৈখালি মোড়ের
আগেই ট্রেন সুড়ঙ্গে প্রবেশ করাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভিআইপি রোড স্পর্শ করা মাত্র সেতুর মতো কাঠামোর অবতরণ জরুরি। না-হলে কারিগরি দিক থেকে মূল কাঠামো এবং র্যাম্পের যে সমতা, তা রক্ষা করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, হলদিরাম উড়ালপুলের উপর দিয়ে মেট্রো নিয়ে যাওয়া হলে সেতুর কাঠামো যত উঁচুতে তুলতে হবে, সেটি নামানোর জন্যও তত বেশি জায়গা লাগবে। ভিআইপি রোডের ওই অংশে সেই পরিসর নেই। সে জন্য সেতুর মতো কাঠামোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে হলদিরাম উড়ালপুল।
‘স্পর্শকাতর’ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেট্রো রেলের শীর্ষ কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, সমস্যা একটা রয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানসূত্র খোঁজা হবে।
পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সচিব স্তরে একটি উপস্থাপনা প্রস্তাব আকারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছেন। ওঁদের বলা হয়েছে, যা জানানোর লিখিত আকারে জানাতে হবে। তার পরেই রাজ্য সরকার তার মতামত জানাবে। পুরো বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।’’