বিপণির প্যাকেটই ধরাল খুনিকে

ঝোপঝাড় থেকে উদ্ধার হওয়া একটি অনলাইন বিপণন সংস্থার প্যাকেটের সূত্র ধরেই দেহ উদ্ধারের তিন দিনের মধ্যে এক তরুণীর খুনের কিনারা করেছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাড়ির পাশেই ঝোপঝাড়। তাতেই লুকিয়ে ছিল তরুণী খুনের সূত্র!

Advertisement

ঝোপঝাড় থেকে উদ্ধার হওয়া একটি অনলাইন বিপণন সংস্থার প্যাকেটের সূত্র ধরেই দেহ উদ্ধারের তিন দিনের মধ্যে এক তরুণীর খুনের কিনারা করেছেন তদন্তকারীরা। রবিবার দুপুরে ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই খুনের মূল অভিযুক্ত রাহুল কুমারকে। সেখানেই তার বাড়ি। সোমবার তাকে নিয়ে কলকাতায় ফেরে লেদার কমপ্লেক্স থানার তদন্তকারী দল।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার সাতগাছির জ্যোতিভীম এলাকায় একটি বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল নাদিয়া পরভিন (২৪) নামে এক তরুণীর পচাগলা দেহ। মাস দুয়েক আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন রাহুল এবং নাদিয়া। সঙ্গেই থাকতেন নবনীত নামে এক আত্মীয়। নাদিয়ার দেহ উদ্ধারের পর থেকেই উধাও হয়ে যায় ওই দু’জন।

Advertisement

কী ভাবে রাহুলের সন্ধান পেল পুলিশ? তদন্তকারীরা জানান, ওই বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময়ে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিলেও তাঁরা কোনও পরিচয়পত্র জমা দেননি বাড়িওয়ালাকে। দেহ উদ্ধারের পরে ঘরের ভিতরে থাকা শিক্ষাগত নথি দেখে নাদিয়াকে শনাক্ত করা হলেও বাকি দু’জনের পরিচায় জানা সম্ভব হয়নি। বাড়িওয়ালাও কোনও তথ্য দিতে পারেননি সন্দেহভাজন ওই দুই যুবক সম্পর্কে। তাই বাড়ির আশপাশের ঝোপঝা়ড় খুঁজতে গিয়ে একটি অনলাইন সংস্থার প্যাকেট মেলে সেখান থেকেই। যে প্যাকেটে চলতি মাসের ১০ তারিখে একটি শাড়ি ডেলিভারি করা হয়েছে ওই বাড়িতে। ওই প্যাকেটের উপরে একটি ফোন নম্বর এবং ঠিকানা মেলে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘দেখা যায় ফোন নম্বরটি পলাতক রাহুলের। যা ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতেই খোঁজ মেলে অভিযুক্তের।’’

কেন খুন হতে হল নাদিয়াকে?

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ঝাড়খণ্ডের পালামৌতেই বাড়ি রাহুল এবং নাদিয়ার। দু’জনের আলাপ বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। রাহুল বিবাহিত হলেও তা সে নাদিয়াকে জানায়নি। নাদিয়া বিয়ের জন্য চাপ দিতেই রাহুল তা জানায় তার আত্মীয় নবনীতকে। সে রাজারহাটে একটি নির্মীয়মাণ হাসপাতালের ক্রেন চালক। মূলত তার মধ্যস্থতায় সাতগাছির জ্যোতিভীম এলাকায় রাহুল ও নাদিয়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেয়। বাড়িওয়ালা বারবার পরিচয়পত্র চাইলে তারা দেবে বলে জানায়। মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে ওই তিন জন সেখানে থাকতে শুরু করে। তবে পুলিশ জানতে পেরেছে, নাদিয়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বললেও ওই দু’জন কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করত না। পুলিশের কাছে ধৃত রাহুলের দাবি, নাদিয়ার মা-বাবা নেই। পরিচয় হওয়ার পরেই তিনি তাকে জানিয়েছিলেন, ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া ওই বাড়িতে এক সঙ্গে থাকার সময়ে বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নাদিয়া। দেহ উদ্ধারের তিন দিন আগে পঞ্চায়েত ভোটের দিন (১৪ মে) বিয়ে নিয়ে তাঁদের মধ্যে ফের ঝামেলা হয়। তখনই নবনীতের সাহায্যে নাদিয়ার মাথা ঘরের ভিতরে দেওয়ালে ঠুকে দেয় সে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় নাদিয়াকে। পুলিশের দাবি, এর পরেই নাদিয়ার দু’টি এটিএম কার্ড নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত নাদিয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষাধিক টাকা তোলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন