বিকিকিনি। চৈত্র সেলের শেষ দিন। শনিবার, গোরাবাজারে। —নিজস্ব চিত্র
নববর্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে হালখাতা খুলছে দমদমের পুড়ে যাওয়া বাজার।
গত ২২ জানুয়ারি অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রায় দেড় মাস দোকান খোলার মতো অবস্থায় ছিলেন না গোরাবাজারের ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ। তাই চৈত্র সেলের বাজারে শুধু বেচাকেনা নয়, খরিদ্দারের কাছে তার চেনা বাজারকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের অলিগলিতে সেই উদ্যোগের ছাপই স্পষ্ট। রাস্তার ধারে যখন জামাকাপড়, চাদর, বালিশের ঢাকনার পসরা সাজিয়ে খরিদ্দারকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, ‘‘খালি দেড়শো। রাস্তার জিনিস সস্তায়!’’ বাজারের ভিতরে তখন পুড়ে যাওয়া দোকানের ‘কসমেটিক সার্জারি’র কাজ শেষ পর্যায়ে। রঙের পোঁচ, কাঠের উপরে হাতুড়ির ঘা তিন মাস আগের ক্ষতে প্রলেপ দিচ্ছে। ফুলের বাজারের কাছে আগুনের তাপ লোহার বিম বেঁকিয়ে দিয়েছিল। সেখানে মাথার উপরে নতুন ছাউনি তৈরির কাজে ঝালাই যন্ত্র থেকে আগুনের ফুল্কি ঝরে পড়ছে। আর এ সবের মধ্যে থেকেই নতুন উদ্যমে পথ চলার রসদ কুড়োচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি আশ্বাসের প্রতি মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার সময় তাঁদের নেই। রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যস্ততা।
বাজারের পুরনো শেডের কাছে মুড়ি, মুড়কি-সহ পুজোর সামগ্রীর দোকান ছয় বোনের। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল ছ’বোনের জমা পুঁজি। শনিবার নববর্ষের পুজোর সামগ্রী বিকিকিনির মধ্যে দম ফেলার ফুরসত নেই সোমা রায়চৌধুরী, ইতি কুণ্ডুদের। এমনিতে গোরাবাজারে চৈত্র সেলের বাজারে একটা ‘সাম্যবাদের’ ধারা আছে। বছরের এই ক’টা দিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো-রুমের মালিকও রাস্তার ধারে জামাকাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেন! সেল, সেল, সেল ডাকের সঙ্গে মিলেমিশে যায় রাস্তার মাল সস্তায় মন্ত্র। জামাকাপড়ের ব্যবসায়ী নিতাই চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রথম দু’সপ্তাহ বিক্রি ভাল হয়নি। কিন্তু বাজার যে আগের মতো বসেছে, তা লোকমুখে চাউর হওয়ার পরে ভাল বিক্রি হয়েছে।’’
ঝড়-বৃষ্টি না হলে স্লগ ওভারে রান আরও উঠবে বলে দাবি সুভাষ নায়েক, রাজু দাসদের। সেলের সময়ে গোরাবাজারে তাঁরা অতিথি ব্যবসায়ী। সারা বছর যে গলি ফাঁকা থাকে, এই এক মাস তাঁদের দৌলতে পা ফেলার জায়গা মেলে না। ভিড় ঠেলে নৌকোর মতো দুলে দুলে এগোয় ৩০ডি বাস। সাদা পোশাকে পকেটমারদের উপরে নজর রাখে দমদম থানার পুলিশ।
ব্যবসায়ী মোহিত সাহা বলেন, ‘‘আমার দোকানের উপরের তলা পুড়ে গিয়েছিল। সব ব্যবসায়ীরাই নিজেদের সাধ্য মতো দোকান মেরামতি করে ব্যবসায় ফিরেছেন।’’ কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ‘এফ’ ব্লকের বিল্ডিং অবিলম্বে ভেঙে ফেলার কথা বলেছিলেন। তা এখনও শুরু হয়নি। ব্যবসায়ী সমিতির তরফে দেবাশিস দত্ত জানান, ‘‘দরজি পট্টি এখনও বসতে পারেনি। ১৭০-১৮০ জন ব্যবসায়ী। পুরসভা যে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে, তাতে সকলের প্রয়োজন মেটা সম্ভব নয়।’’
এই সব আক্ষেপকে সঙ্গী করেই নূতনের জয়গানে আজ, রবিবার শুভ নববর্ষ বলবে পুড়ে যাওয়া বাজার।