মুক্ত হোন রবীন্দ্রনাথ, দাবি উঠল আলোচনায়

শনিবার শহরের এক বই বিপণিতে ‘ডাকঘর’, ‘পথের সঞ্চয়’, ‘ছিন্নপত্রাবলী’-সহ রবীন্দ্র-সাহিত্যের ছ’টি ইংরেজি অনুবাদের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সেই শর্তেই হাজির ছিলেন শঙ্খবাবু।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫২
Share:

অনুষ্ঠানে শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে সৌরীন ভট্টাচার্য এবং অমিয় দেব। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

প্রকাশকের তরফে অনেক বার অনুরোধ করা হয়েছিল কিছু বলার জন্য। রবীন্দ্রনাথের লেখার ইংরেজি অনুবাদের বই প্রকাশ, আর তিনি কিছু বলবেন না! এটা হয় নাকি! কিন্তু তিনি রাজি হননি। সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবশ্য উপস্থিত থাকলেও কিছু বলবেন না, এই শর্তেই গিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ।

Advertisement

শনিবার শহরের এক বই বিপণিতে ‘ডাকঘর’, ‘পথের সঞ্চয়’, ‘ছিন্নপত্রাবলী’-সহ রবীন্দ্র-সাহিত্যের ছ’টি ইংরেজি অনুবাদের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সেই শর্তেই হাজির ছিলেন শঙ্খবাবু। অনেক বার না বলার পরেও একটিমাত্র বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন। রবীন্দ্রনাথ কি আরও একটু সংক্ষিপ্ত, আরও একটু বাহুল্যহীন হলে পারতেন? কখনও কী মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের ‘প্রিসিশন’ কম? এ প্রশ্নের উত্তরে কবি বললেন, ‘‘আমার তা মনে হয় না!’’ আর ওই একটিমাত্র কথা দিয়েই রবীন্দ্রভুবনের সঙ্গে বাঙালি মানসের আত্মিক যোগ বুঝিয়ে দিলেন শঙ্খবাবু। কিছু জগতের নিজস্ব মর্মার্থ প্রকাশিত হয় তার বিস্তারে। রবীন্দ্রজগতেরও সেই বিস্তার, সেই ব্যাপ্তি দরকার।

আসলে বাঙালি জীবনের যা কিছু আর্দ্র, যা কিছু দ্রব, তার সবটুকুই রবীন্দ্র-সম্পৃত্ত। অথচ সেই রবীন্দ্রনাথকেই বাঙালি এমন এক উচ্চতায় বসিয়ে রেখেছে, যার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এ অনেকটা উঁচু স্তরের, এ ঠিক আমাদের জন্য নয়।’’ এ এমন এক ‘কুসংস্কার’, যাতে বাংলা ভাষার প্রাণপুরুষের সঙ্গেই এক অনতিক্রম্য দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বাঙালির।

Advertisement

আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথকে বোঝার জন্য কি কোনও বিশেষ ‘স্ট্র্যাটেজি’ রয়েছে? এমন প্রশ্নও উঠে এল এ দিন। বক্তাদের মতে, রবীন্দ্রনাথ বুঝতে গেলে রবীন্দ্রনাথ পড়তে হবে। ‘‘তাকের থেকে বই নামিয়ে পড়ে ফেলতে হবে,’’ বলছেন সৌরীনবাবু। শুধু ইংরেজি নয়, সমস্ত ভারতীয় ভাষাতেও যে আরও অনেক বেশি করে রবীন্দ্র-সাহিত্যের অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধ্যাপক অমিয় দেব। আর এক বক্তা, অধ্যাপক সোমদত্তা মণ্ডল বলছিলেন, কী ভাবে রবীন্দ্রনাথ কখনও সাধু ভাষা বাতিল করে কোনও লেখার পুরো পাণ্ডুলিপি চলিত ভাষায় লিখেছেন, বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন ভাষা নিয়ে।

কিন্তু তার পরেও কি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দূরত্ব কমবে না আমবাঙালির? সৌরীনবাবু একটা ঘটনার কথা বললেন। শিয়ালদহ চত্বরে রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি নাটক অভিনীত হচ্ছিল। ছেঁড়া জামা, গায়ে ময়লা নিয়ে একটা ছোট্ট ছেলে হাতে পেয়ারা নিয়ে খেতে খেতে নাটকটা দেখছিল। দেখতে দেখতে এক সময়ে ছোট্ট ছেলেটা আধখাওয়া পেয়ারার কথা ভুলে গিয়েছিল। অপলক ভাবে সে দেখছিল ওই নাটক। অনতিক্রম্য দূরত্বের বর্মে থাকা রবীন্দ্রনাথ যেন নিমেষে আবরণহীন হয়ে পথের ধুলোয় মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিলেন সে দিন!

ওই রবীন্দ্রনাথকেই এই মুহূর্তে সকলের চাই। যে ব্যাপ্তির মধ্যে, যে জগতের মধ্যে সব স্তর মিলেমিশে এক হয়ে যাবে। এ দিনের সন্ধ্যার আলোচনার নির্যাস এটাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন