জন্মের শংসাপত্র নেই, ছাত্রীকে পড়ায় বাধা স্কুলে

ওই অশিক্ষক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা নানা সময়ে অসহযোগিতা করেন। জন্মের শংসাপত্র নেই বলে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছিলেন না।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

পরীক্ষায় পাশ করতে গেলে জন্মের শংসাপত্র থাকা প্রয়োজন। না থাকলে ছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারবে, কিন্তু তাকে পাশ করানো হবে না। অভিযোগ, জন্মের শংসাপত্র না থাকা এক ছাত্রীর ক্ষেত্রে সম্প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছেন ভবানীপুর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। ঘটনার প্রতিবাদ করেন স্কুলের এক অশিক্ষক কর্মী। পরে আধার কার্ডের ‘জোরে’ ওই ছাত্রী পরীক্ষায় বসলেও তাকে পাশ করানো হবে কি না, এ নিয়ে সংশয়ে পরিবার।

Advertisement

ওই অশিক্ষক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা নানা সময়ে অসহযোগিতা করেন। জন্মের শংসাপত্র নেই বলে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছিলেন না। আমরা প্রতিবাদ করায় এখন পরীক্ষায় বসতে দিলেও পাশ না করাতে বলেছেন। এমন কাজ শিক্ষার অধিকার আইনের পরিপন্থী।’’ প্রধান শিক্ষিকা অনিতা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমার স্কুলের অনেকেরই জন্মের শংসাপত্র নেই। সরকার এ নিয়ে কড়া নিয়ম করেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে সেটা দেখা আমার কাজ।’’

স্কুল সূত্রে খবর, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা ওই ছাত্রী তৃতীয় শ্রেণিতে ভবানীপুর গার্লস স্কুলের প্রাতঃবিভাগে ভর্তি হয়। সেই সময়ে তার জন্মের শংসাপত্র ছিল না। পরে পঞ্চম শ্রেণিতে ভবানীপুর গার্লস স্কুলে (দিবা বিভাগ) ভর্তি হয় ওই ছাত্রী। প্রতিবাদী শিক্ষাকর্মীর দাবি, ভর্তির সময়েই বাধা দিয়েছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। পরে অবশ্য স্কুল থেকেই উদ্যোগী হয়ে তার আধার কার্ড করিয়ে দেওয়া হয়। সেই কার্ড দেখিয়েই আপাতত পরীক্ষায় বসতে পেরেছে মেয়েটি। অনিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘স্কুলের শিক্ষাকর্মীদের একাংশ কাগজপত্র ছাড়াই স্কুলে ভর্তি করিয়ে চলেছেন। এটা বেআইনি।’’

Advertisement

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছাত্রীটির বাড়ি লক্ষ্মীকান্তপুরে। তার মা মারা গিয়েছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তিনি মেয়ের দায়িত্ব নিতে চান না। মেয়েটির এক আত্মীয় তাকে কাজ করানোর জন্য হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। এখন সে ওই বাড়িতেই থাকে। ওই বাড়ির গৃহকর্তা বললেন, ‘‘ওকে দিয়ে কাজ করানোর বদলে স্কুলে পাঠিয়েছি। পড়াশোনায় ভাল। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে। পড়া আটকে যাবে ভাবতে পারছিলাম না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘স্কুল থেকে খবর পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। কিন্তু, জন্মের শংসাপত্র হতে তো সময় লাগবে!’’

প্রধান শিক্ষিকার ফরমানে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারাও। একাংশ ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলছেন, পড়াশোনা চালাতে কি শংসাপত্রই আগে চাই! কাগজ না থাকলে কি পড়তে পারবে না? এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘এ কেমন কথা, কাগজ নেই তবু স্কুলে রাখব, পরীক্ষা দিতে দেব। কিন্তু পাশ করাব না!’’ অন্য পক্ষের শিক্ষিকাদের দাবি, ‘‘এখন আটকানো না গেলে মাধ্যমিকের সময় সমস্যা হবে। এ ভাবে জন্মের শংসাপত্র ছাড়া ভর্তি নিলে সরকারকে জবাব দিতে হবে স্কুলকেই। প্রধান শিক্ষিকা ঠিকই বলেছেন।’’

সর্বশিক্ষা মিশন কলকাতার চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বললেন, ‘‘স্কুল সম্পূর্ণ ভুল কাজ করছে। শিশুটি ক্লাস করবে, পরীক্ষা দেবে, ফলও বেরোবে। নিয়ম অনুযায়ী বাচ্চার জন্মের তারিখ-সহ ঘোষণাপত্র অভিভাবক স্কুলে জমা করলেই হবে। প্রয়োজনে স্কুল আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুক।’’ প্রসঙ্গত, শিক্ষার অধিকার আইনে কোনও শিশুই স্কুলের বাইরে থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন