ভাগ্য ঝুলে ভগ্নস্তূপের

২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল ওই উড়ালপুল তৈরির কাজ। স্থানীয় সমস্যায় কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ফের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালে ভেঙে পড়ে ওই উড়ালপুলের একাংশ।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য, সোমনাথ চক্রবর্তী ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:২১
Share:

এখন-তখন: বদলেছে ছবি। দু’বছর আগের আতঙ্ক ফিকে হয়েছে। পোস্তা উড়ালপুলের নীচে নিশ্চিন্ত বিশ্রাম রিকশাচালকের। ছবি: সুমন বল্লভ

২৬টি প্রাণ এবং ১৫০ কোটি টাকা খোয়ানোর পরে কেটে গিয়েছে দু’বছর! এখনও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে খণ্ডহরের মতো দাঁড়িয়ে আছে পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুল!

Advertisement

ওই ‌ঘটনায় যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের কাজও এখনও শেষ হয়নি। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, গোটা বিপর্যয়ের দায় কি শুধু কেএমডিএ-র কয়েক জন আধিকারিকের, না কি ওই উড়ালপুলের সামগ্রিক পরিকল্পনাতেই গলদ ছিল? যদি তা-ই হয়, তা হলে প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই কিন্তু তার দায় এড়াতে পারেন না।

২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল ওই উড়ালপুল তৈরির কাজ। স্থানীয় সমস্যায় কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ফের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালে ভেঙে পড়ে ওই উড়ালপুলের একাংশ। মারা যান ২৬ জন। সেই বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক তরজা।

Advertisement

রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে অনেকেরই ধারণা, পোস্তা এলাকার এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ওই এলাকায় উড়ালপুল তৈরির বিরুদ্ধে ছিলেন। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা ছিল, উড়ালপুলের আড়ালে দোকান ঢাকা পড়লে ব্যবসার ক্ষতি হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশেই দীর্ঘদিন উড়ালপুলের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল বলে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের ধারণা। তাঁরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের ওই অংশই উড়ালপুলটি ভেঙে ফেলার পক্ষে জোরদার সওয়াল শুরু করেছেন।

এ ভাবেই ভেঙে পড়েছিল উড়ালপুল। —ফাইল চিত্র।

স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ, ওই উড়ালপুলের নির্মাণকাজে সরকারি তরফে নজরদারি কোনও সময়েই ছিল না। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের হাতেই ছিল মাল সরবরাহের দায়িত্ব। নকশার গলদ এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে উড়ালপুল তৈরি করতে গিয়েই যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের সঙ্গীদের কারও গায়ে হাত না পড়ায় তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। রাজনৈতিক নেতারা অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটি রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে, ওই উড়ালপুল দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ, অকেজো ওই উড়ালপুলটিকে ভেঙে ফেলার পক্ষেই মত দিয়েছেন তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার।

এই পরিস্থিতিতে ফের নতুন একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চাইছে নবান্ন। সরকারি কর্তাদের একাংশের দাবি, কয়েক দিনের মধ্যেই বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগের জন্য দরপত্র ডাকা হবে। নিয়োগের মাস তিনেকের মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। প্রশ্ন উঠেছে, এই তৎপরতা দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরুর সময়ে কেন দেখা যায়নি!

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রত্যেকেই এখন জামিনে মুক্ত। দু’বছর পার হয়ে গেলেও এঁদের মধ্যে চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে পারেনি পুলিশ। বাকিরা হলেন, নির্মাণ সংস্থার দশ জন কর্মী এবং কেএমডিএ-র দুই কর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়লেও চার্জ গঠন হয়নি এখনও। যার ফলে থমকে রয়েছে বিচার-প্রক্রিয়া।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, ২৭ এপ্রিল নগর দায়রা আদালতে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার আগেই বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট সংগ্রহ করে চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ কাজ চলাকালীন পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একটি অংশ গণেজ টকিজ মোড়ের কাছে ভেঙে পড়ে। ২৬ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি জখমও হন বহু মানুষ। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে নির্মাণকারী সংস্থা আইভিআরসিএল-এর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ দল তদন্ত শুরু করে। আদালত সূত্রের খবর, যে সব ধারায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নন অভিযুক্তেরা। তাঁরা ওই ধারা বদলের আবেদন করেছেন বিচারকের কাছে। সেই কারণে ওই মামলায় চার্জ গঠনে দেরি হচ্ছে বলে পুলিশের একটি অংশ দাবি করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন