এ যেন প্রথমে চোরের উপরেই জোচ্চুরি! আর তার পরে জোচ্চরের উপরে বাটপাড়ি!
মেটিয়াবুরুজ এলাকায় কয়েক লক্ষ টাকা পকেটমারির তদন্তে নেমে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে পুলিশের। ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা এখনও অধরা। খোয়া যাওয়া অর্ধেকের বেশি টাকা উদ্ধার করা গেলেও বাকি টাকার খোঁজে চলছে তল্লাশি। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম শেখ হাসান ও রোশন মোল্লা। দু’জনেরই বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফে। তাদের জেরা করার পরে প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আর ধৃত রোশন মোল্লাই দিয়েছে গোটা ঘটনার বিবরণ।
তদন্তকারীরা জানান, মেটিয়াবুরুজের ব্যবসায়ী নারায়ণ প্রসাদ গত শনিবার সকালে ওই এলাকার এবিএম হাটে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখানেই হঠাৎ রাস্তায় চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে এবং তাঁর পকেটে থাকা প্রায় দু’লক্ষ টাকা তুলে নেয়। নারায়ণের চিৎকারে হাটে থাকা জনতা হাসানকে ধরে ফেলে। তবে বাকিরা পালিয়ে যায়।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ওই ঘটনায় পাঁচ জন যুক্ত ছিল। কিন্তু পুরো টাকাটা তারা হজম করতে পারেনি। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ঘটনাস্থলে হাসান ধরা পড়ে যাওয়ায় বাকি দুষ্কৃতীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তারা যে ওই ব্যবসায়ীর পকেট কেটেছে, তা লক্ষ করেছিল এলাকার কয়েক জন মাদকাসক্ত। রোশন যখন জনতার মারের ভয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে, তখন ওই মাদকাসক্তেরা তাকে আটক করে এলাকার একটি ঘরে নিয়ে যায়। তার পরে তাকে মারধর করে ওই চুরির টাকার ভাগ চায়। রোশনকে আটক করে এলাকার মাদকাসক্তেরা যে মারধর করছে, তা জানতে পেরে তার সঙ্গীরাও সেখানে পৌঁছে যায়। পুলিশের কাছে রোশনের দাবি, ওই মাদকাসক্তেরা তাকে ছাড়তে রাজি হয়। কিন্তু বিনিময়ে লুঠের টাকা দু’ভাগ করতে বলে তারা। রোশনের সঙ্গীরা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। মাদকাসক্তদের টাকার ভাগ দেওয়ার পরে বাকি টাকা-সহ রোশনকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালায় তারা।
এখানেই অবশ্য ঘটনার ইতি নয়। ওই টাকার ভাগ না পেয়ে মাদকাসক্তদেরই এক জন রাজাবাগান এলাকার একটি ক্লাবের কয়েক জন যুবককে ওই ঘটনার কথা জানায় এবং রোশন-সহ বাকি দুষ্কৃতীদের চিহ্নিতও করে দেয়। এর পরে সেই টাকার ভাগ পেতে আসরে নামে ওই ক্লাবের ছেলেরা। সেই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঘুটিয়ারি শরিফের ওই দুষ্কৃতী দলকে আটকে করে তারা। চলে বেধড়ক মারধর। তাদের হুমকির মুখে পড়ে ফের সেখানে টাকার ভাগ দিতে হয় রোশনদের।
পুলিশ জানায়, ধরা পড়ার পরে হাসান জেরার মুখে বাকি দুষ্কৃতীদের নাম বলে দিয়েছিল। পরের দিনই ঘুটিয়ারি শরিফে হানা দিয়ে রোশনের খোঁজ পায় পুলিশ। চুরির টাকা কোথায়, সেই খোঁজ করতে গিয়েই সামনে আসে ঘটনাটি। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই ব্যবসায়ীর চুরি যাওয়া বাকি টাকার সঙ্গে ঘটনায় যুক্ত বাকি দুষ্কৃতীদেরও খোঁজ চলছে।’’