‘দরকারে পুলিশে যাব, কিন্তু অটো চালাবই!’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি টালিগঞ্জ-হাজরা রুটে শহরের প্রথম মহিলা চালিত অটোর রুট চালু হবে বলে ঘোষণা করা হয়। লাইসেন্সেরও আবেদন করেন ১৬ জন মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০১:১৪
Share:

শহরের রাস্তায় অটো চালাতে এ বার পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন মহিলারা। বৃহস্পতিবার তাঁরা জানান, দ্রুত নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসতে চলেছেন তাঁরা। সেখানেই পুলিশে অভিযোগের জন্য ১৬ জন মহিলা অটোচালক অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করবেন। এর পরে ওই অভিযোগপত্র পুলিশের কাছে জমা করা হবে। কৃষ্ণা বিজলি নামে ওই মহিলাদেরই এক জন বলেন, ‘‘আমরা চোর নই। অটো চালানো কি অপরাধ? পুলিশের কাছে তা-ই জানতে চাইব।’’

Advertisement

গত ৬ ফেব্রুয়ারি টালিগঞ্জ-হাজরা রুটে শহরের প্রথম মহিলা চালিত অটোর রুট চালু হবে বলে ঘোষণা করা হয়। লাইসেন্সেরও আবেদন করেন ১৬ জন মহিলা। তাঁদের কয়েক জন ইতিমধ্যেই লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছেন। যদিও অটো নিয়ে রাস্তায় নামা
হয়নি তাঁদের। অভিযোগ, ওই রুটের পুরুষ চালকদের বাধাতেই অটো চালানো শুরু করতে পারছেন না মহিলারা। এমনকী, অটো চালাতে এলে তাঁরা ধর্ষিতা হয়ে যেতে পারেন বলে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। মহিলারা চালানোর জন্য কোনও অটো যাতে ভাড়া নিতে না পরেন, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। ওই রুটে তৃণমূল পরিচালিত অটো ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তারক দে আবার বলেছেন, ‘‘মেয়েরা বাড়িতেই ভাল। অটো চালানো তাঁদের কাজ নয়। কেউ ‘রেপ’ করে দিলে তার দায় কে নেবে?’’ যদিও এ দিন তারকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। এসএমএস-এরও উত্তর আসেনি।

এই খবর বৃহস্পতিবারের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরে সমালোচনার ঝ়়ড় উঠেছে। অনেকেরই বক্তব্য, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা, সেখানে এই কাজ হয় কী ভাবে? কেউ কেউ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতা জেলা অটো ড্রাইভার্স অ্যান্ড অপারেটর্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সুতার বললেন, ‘‘এ ভাবে বাধা দিয়ে মহিলাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা সকলেই পাশে আছি।’’

Advertisement

ওই মহিলাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে রাজ্যের মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, মেয়েদের জন্মগত কোনও অক্ষমতা নেই। তাই মেয়ে বলে অটো চালাতে পারবে না, সেটা হতে পারে না। এটা পেশার অধিকার। সেই অধিকার যে রুখবে তাদের বিরুদ্ধে কমিশন লড়াই করবে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের কাজের অধিকার আদায়ের জন্য যত দূর লড়াই চালানো যায়, চালাব।’’ পাশাপাশি, ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের এ সব বলে পিছিয়ে রাখার চেষ্টা চলে। কিন্তু এ দেশের মেয়েরা প্লেন থেকে রকেট, সবই চালাচ্ছেন। তাই অটো চালানোতেও এ সব বলে আটকানো যাবে না।’’

তন্দ্রা সাধুখাঁ নামে এক মহিলা অটোচালক এ দিনও জানালেন, পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই। বাবা-মা এবং মামাকে বসিয়ে নিজেই অটো চালিয়ে তিনি এ দিন ডায়মন্ড হারবার রোডের আমতলায় একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়েছেন। সেখান থেকে ফোনে বললেন, ‘‘লাইসেন্স হয়ে গেলেও রুটে ঢুকতে পারছি না। এ বার পুলিশে যাব। আজই তো বাবা-মায়েদের নিয়ে কলকাতা থেকে এতটা পথ এলাম। আমি চালাতে না পারলে কি বাবা-মা আসত?’’ মেয়ের অটোয় চড়তে ভয় করে না? তন্দ্রার বাবা রতন বললেন, ‘‘ভয়ের কী আছে? কলকাতায় চালাচ্ছে। তার কাছে এই রাস্তা তো ফাঁকা। আমার মেয়ে চ্যাম্পিয়ন। কোনও সমস্যা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন