পুলিশের লাঠি হাতে পার্কিং-শাসন

স্থান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রধান গেট। সময়, বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে। ভিক্টোরিয়ার গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা রয়েছে ‘নো পার্কিং’।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৩
Share:

অনিয়ম: পুলিশের লাঠি হাতে গাড়ি সামলাচ্ছেন যুবক। বৃহস্পতিবার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে।

লাঠি পুলিশের। কিন্তু সেটি শোভা পাচ্ছে স্থানীয় যুবকদের হাতে! পুলিশের ব্যবহার করার সেই লাঠি দিয়ে ‘নো পার্কিং’ এলাকায় গাড়ি সামলাচ্ছেন ওই যুবকেরা।

Advertisement

স্থান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রধান গেট। সময়, বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে। ভিক্টোরিয়ার গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা রয়েছে ‘নো পার্কিং’। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই সেখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে হলুদ ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব এবং এসি ট্যাক্সি। আর সেই ট্যাক্সিগুলোকে লাঠি উঁচিয়ে সামলাচ্ছেন স্থানীয় এক যুবক। ট্র্যাফিক পুলিশেরা যেমন লাঠি ব্যবহার করেন, ওই যুবকের হাতে রয়েছে তেমনই একটি লাঠি।

এই লাঠি কোথায় পেলেন? এক গাল হেসে ওই যুবক বলেন, ‘‘এখানকার ট্র্যাফিক পুলিশ শৌচাগারে গিয়েছেন। তাই পুলিশের লাঠি নিয়ে আমরা এখানে নো এন্ট্রি জোনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি সামলাচ্ছি।’’

Advertisement

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের গেট থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন গাড়ির চালকের অবশ্য অভিযোগ, গাড়ি সামলানোর নামে সেখানে বহু দিন ধরে চলছে তোলাবাজি। ওই যুবকদের ১০০ টাকা দিলেই ভিক্টোরিয়ার প্রধান গেটে আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি মেলে। ওই চালকদের আরও অভিযোগ, কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশেই চলে এই তোলাবাজি। রবীন মণ্ডল নামে এক গাড়ির চালক বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে পুলিশের লাঠি হাতে তোলাবাজির সাহস পায় কী ভাবে?’’

পার্কিং নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ ভাবেই রাখা থাকে গাড়ি।

বুধবার দেখা গেল, দু’টি গাড়ি লক করা অবস্থায় ভিক্টোরিয়ার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু ক্ষণ। গাড়ি দু’টির চালকেরা ফিরে এলে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কত টাকা দিতে হবে, তা নিয়ে স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে প্রকাশ্যেই চললো দরাদরি। একটি গাড়ির চালক বলেন, ‘‘কাল এখানে আধ ঘণ্টা দাঁড়ানোর জন্য ১০০ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ কেন ১৫০ টাকা চাইছে?’’

ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে প্রায় আধ ঘণ্টা। এই গোলমালের মধ্যেও ভিক্টোরিয়ার প্রধান গেটে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা মিলল না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। তিনি অবশ্য এ দিকে নজর দেননি। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা গেল, ভিক্টোরিয়ার গেটের নো পার্কিং লেখার সামনে আরও গাড়ির লাইন পড়েছে। লাঠি উঁচিয়ে গাড়ি সামলাতে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ওই যুবকেরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে অবশ্য ওই জায়গায় পুলিশের দেখা মিলল। কর্তব্যরত পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘শৌচাগারে গিয়েছিলাম। পরে শুনলাম আমার লাঠিটা নিয়ে কয়েক জন যুবক গাড়ি সামলাচ্ছিলেন। এমন করা উচিত নয়। আমি ওঁদের বকেছি।’’ আর তোলাবাজির অভিযোগ? ওই পুলিশকর্মী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি দাঁড়াতেই দিই না। বেশি ক্ষণ গাড়ি দাঁড়ালে তাড়িয়ে দিই।’’

কর্তব্যরত পুলিশকর্মী এই দাবি করলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ‘নো পার্কিং’ জোনে দেখা গেল গাড়ির সারি। বুধবার পুলিশের লাঠি নিয়ে যে যুবকেরা গাড়ি সামলাচ্ছিলেন, তাঁদেরও ইতিউতি দেখা গেল। ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার অবশ্য বলেন, ‘‘ওখানে দীর্ঘ ক্ষণ গাড়ি দাঁড়ানোর নিয়ম নেই। তবে পর্যটকেরা অনেক সময়ে ছবি তোলার জন্য কিছু ক্ষণের জন্য গাড়ি থামান। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন