ভাবনা: এমন দৃশ্য ঠেকাতেই কড়া হচ্ছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।
বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বা অন্য গাড়ির সঙ্গে রেষারেষি করে দুর্ঘটনা ঘটালেন চালক। কিন্তু তদন্তে দেখা গেল, চালকের বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁর হাতেই স্টিয়ারিং তুলে দিয়েছেন মালিক। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করবে পুলিশ।
অথবা তদন্তে হয়তো প্রমাণিত হল, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো না হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে ক্ষেত্রেও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবে পুলিশ।
কলকাতা শহরে দুর্ঘটনা কমাতে চলতি মাস থেকে এমনই কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। যদিও মালিকদের বক্তব্য, পুলিশের কাছে তাঁরা সব সময়েই ‘সফ্ট টার্গেট’। তাই এমন পদক্ষেপ। এতে আখেরে দুর্ঘটনা কমবে না বলেই দাবি করেছেন তাঁরা।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যাথিড্রাল রোড দিয়ে ধর্মতলার দিকে যাচ্ছিল হাওড়াগামী একটি মিনিবাস। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাতে দেখে সেটিকে আটক করেন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। চালকের কাছে তাঁর এবং গাড়ির নথি দেখতে চান। কিন্তু চালক তাঁর লাইসেন্সই দেখাতে পারেননি বলে দাবি পুলিশের। কারণ, নিয়ম ভেঙে গাড়ি চালানোর অপরাধে মাস দু’য়েক আগে ওই চালকের লাইসেন্সই তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল পুলিশ। বিষয়টি জানার পরে চালককে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি, চালকের লাইসেন্স সাসপেন্ড হওয়া সত্ত্বেও তাঁর হাতেই স্টিয়ারিং দেওয়ার অপরাধে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: পাঁচ তলা থেকে পড়েও প্রাণরক্ষা শিশুর
কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অন্য অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য গা়ড়ির নম্বর ধরে মামলা দায়ের হয়। সে ক্ষেত্রে জরিমানা দিতে হয় মালিককেই। এ বার থেকে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও মালিকের ভূমিকা খতিয়ে দেখার পিছনে কারণ কী? পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘চালকের নথিপত্র পরীক্ষা না করেই তাঁকে গাড়ি চালাতে দিলে বা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি থাকলে মালিকেরাও মামলার আওতায় আসবেন।’’
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘বাণিজ্যিক ভাবে গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে যে মালিক ব্যবসা করছেন, তাঁরও তো কিছু দায় থাকে। সেই দায়িত্ব তো পালন করতে হবে।’’
যদিও এতে আখেরে কোনও লাভ নেই বলে দাবি করেছেন বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্সের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুতেই আমাদের দোষ। কোন বাস কে চালাবেন, তা আমরা ঠিক করতে পারি না। সব কিছুই ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমাদের কাছ থেকে জরিমানা নিয়েও লাভ নেই।’’ মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ-র আবার বক্তব্য, ‘‘সব কিছুই পিছনেই একটা অর্থনীতি আছে। সরকার ভাড়া বাড়াচ্ছে না। আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। কিস্তির টাকা শোধ করতে পারছি না। আবার বলছে উন্নত পরিষেবা দিতে। কী করে তা সম্ভব!’’