আপনি কি অভিযুক্ত, জানাবে পুলিশের নতুন পোর্টাল

আচমকা বাড়িতে গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পুলিশ। হতচকিত অবস্থা কাটিয়ে ওঠার আগেই লালবাজারের উর্দিধারীরা গ্রেফতার করে ভ্যানে তোলেন বেলেঘাটার বাসিন্দা, পেশায় আইটি কর্মী অরবিন্দ ভট্টাচার্যকে।

Advertisement

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২০
Share:

আচমকা বাড়িতে গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পুলিশ। হতচকিত অবস্থা কাটিয়ে ওঠার আগেই লালবাজারের উর্দিধারীরা গ্রেফতার করে ভ্যানে তোলেন বেলেঘাটার বাসিন্দা, পেশায় আইটি কর্মী অরবিন্দ ভট্টাচার্যকে। পাড়ার লোকজন তখন ভিড় করে দেখছে।

Advertisement

বছর বিয়াল্লিশের ওই ব্যক্তি জানতে পারেন, বার বার সমন পাঠালেও তিনি হাজিরা না দেওয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। যা কার্যকর করতে পুলিশ বাধ্য। তবে অরবিন্দবাবু এ সব কিছুই জানতেন না। কী মামলা, কেনই বা হাজিরার জন্য সমন, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে তিনি। পরে অবশ্য এক দিনের মধ্যেই আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেয়। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, আগে জানতে পারলে অন্তত আগাম জামিনের আবেদন করতেন, বিষয়টি নিয়ে অন্য আইনি পরামর্শও নিতে পারতেন, সে ক্ষেত্রে সামাজিক সম্মানহানি এড়ানো যেত।

এর কারণ হল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১-এ ধারায় অভিযুক্তকে নোটিস পাঠায় পুলিশ। কোনও কারণে যদি বারবার যাওয়া সত্ত্বেও সেটি অভিযুক্তের হাতে না পৌঁছয় সে ক্ষেত্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। অরবিন্দবাবুর মতো পরিস্থিতিতে পড়ার আশঙ্কাও থেকেই যায়। এই সমস্যা থেকেই রেহাই পাওয়ার সুযোগ করে দিতেই এ বার একটি নতুন সুবিধে নিয়ে হাজির হয়েছে কলকাতা পুলিশ। পুরনো পদ্ধতিতে অভিযোগ নিয়ে অভিযুক্তের অবগত হওয়ার পাশাপাশি তাঁরা যাতে ঘরে বসেই এই তথ্য পেয়ে যান, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে লালবাজার।

Advertisement

কোনও অভিযোগ দায়ের হলে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত— দু’পক্ষই যাতে জানতে পারেন, তার জন্য কলকাতা পুলিশের নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি পোর্টাল চালু করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, এ বার কোনও থানায় অভিযোগ দায়ের হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ওই পোর্টালটিতে তুলে দেওয়া হবে। কলকাতার ৬৯টি থানা ছাড়াও এতে দেওয়া থাকবে সাইবার অপরাধ থানা ও এসটিএফ থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগও। ফলে, কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট নিয়মিত দেখলে ওই তথ্য পাওয়া যাবে অনায়াসে। কলকাতা পুলিশের হোম পেজে গিয়ে বাঁ দিকে পরপর বিভিন্ন ‘অপশন’ রয়েছে। সেখানে এফআইআর-এ ক্লিক করলেই কলকাতা পুলিশের কাছে দায়ের হওয়া সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে জানা যাবে। ১৫ নভেম্বর এই পরিষেবা চালু হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই স্বচ্ছতার প্রয়োজনে এ রকম একটি ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করছিলাম আমরা। শেষ পর্যন্ত এটা করা গেল। এতে মানুষের উপকার হবে।’’

এমনিতে কলকাতার যে থানাতেই অভিযোগ দায়ের হোক, ‘ক্রাইমবাবু’ নামে সফ্‌টওয়্যার থেকে একটি অ্যাপের সাহায্যে তা লালবাজারকে অনলাইনে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগকারী ছাড়া অন্য কেউ, বিশেষত অভিযুক্ত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পারেন না। বেলেঘাটার অরবিন্দবাবুর মতো জানতে পারছেন, পুলিশ যখন একেবারে গ্রেফতার করতে দোরগোড়ায় পৌঁছেছে।

সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র ও সি নাগাপ্পনের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে— অভিযুক্তের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তা জানার। তাই পুলিশের এই নতুন পদক্ষেপ সাইবার দুনিয়ায়। লালবাজারের দাবি, ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণে অনেকেই অন্যকে হেনস্থা করার জন্য সুচারু ভাবে ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেন। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক খোঁজ না নিয়েই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে মামলা রুজু করতে হয় পুলিশকে। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, ‘‘উল্টোপাল্টা অভিযোগ হয়েছে জানলে অভিযুক্ত নিজে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালতে জানিয়ে মামলা তুলে নেওয়া হবে। ফলে পোর্টাল চালু হওয়ার পরে ভুয়ো অভিযোগ করার প্রবণতা কমবে বলে আশা করছি।’’

লালবাজার সূত্রে খবর, নতুন পোর্টালে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের পরিচয়, কোন থানায় কত তারিখে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, মামলার বিষয়বস্তুর উল্লেখ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া থাকবে অভিযোগপত্রের ফোটোকপিও। তবে চাইলেই কেউ পোর্টাল থেকে যে কোনও অভিযোগপত্র বার করে নিতে পারবেন না। নিজের নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বর-সহ একাধিক তথ্য জানতে চাওয়া হবে তাঁর কাছ থেকে। তেমন প্রয়োজনে ওই ব্যক্তির মোবাইলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠিয়ে যাচাই করা হবে। এ ছাড়াও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য ছেঁকে নেওয়ার বন্দোবস্ত থাকবে পোর্টালে।

তবে পুলিশের অনেক পদক্ষেপই গোপন রাখা হয় তদন্তের স্বার্থে। তাই সব অভিযোগ পোর্টালে তোলা হবে না। মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ, জঙ্গি কার্যকলাপ, শিশুর নিখোঁজ হওয়া বা অপহরণের ঘটনা, কোনও গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অনিয়মের মামলা বা অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুজু করা মামলার উল্লেখ পোর্টালে থাকবে না। লালবাজারের বক্তব্য, এই ধরনের মামলার পরিমাণ ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ মামলা পোর্টালে দেওয়া থাকবে। তবে ১৫ নভেম্বর থেকে এই পোর্টাল চালু হওয়ায় তার আগে দায়ের হওয়া কোনও অভিযোগ এতে থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন