আনন্দ: উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে। শুক্রবার, বেথুন স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ
মাত্র এক দিনের ব্যবধান। কলকাতার বাংলা মাধ্যমের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে যাবতীয় আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিল উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল।
গত বুধবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে দেখা গিয়েছিল সেরা দশে ৫৬ জনের মধ্যে ঠাঁই হয়েছে কলকাতার মাত্র দু’জনের। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল, সেরা দশে ৮০ জনের মধ্যে ১৩টি স্থান দখল করতে পেরেছে কলকাতা। সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের স্কুল ছাড়াও রাজ্য সরকারের স্কুলেও যে মেধা রয়েছে, তা দেখে স্বস্তি পেল শিক্ষামহলও। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে পারলেও কেন মাধ্যমিকে পিছিয়ে পড়ল শহরের পড়ুয়ারা, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। শিক্ষকদের অধিকাংশই বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ মেলে বলেই হচ্ছে ভাল ফল। তবে স্কুল শিক্ষা দফতরের মত, মাধ্যমিকে নতুন পাঠ্যক্রমে ধাতস্থ হতে সময় লাগছে।
শিক্ষা শিবিরের মত, বর্তমানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ। উচ্চ মাধ্যমিকেও একই ভাবে কেউ বিজ্ঞান, কেউ কলা বা বাণিজ্য নিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ মহাপাত্রের মতে, সেরা দশে আসতে হলে অঙ্ক ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি ইতিহাস, ভূগোল ও সাহিত্যেও বেশি নম্বর পেতে হবে। শহরের মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতার অভাব ক্রমশই লক্ষ্য করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে মাধ্যমিক স্তরে বিষয় বাছাই করে পড়াশোনা করার প্রবণতা কম। তাই তারা এগিয়ে থাকে। একই কথা বলেছেন মিত্র ইনস্টিটিউশন (ভবানীপুর)-এর প্রধান শিক্ষক অসিতবরণ গিরিও। শহরের পড়ুয়াদের এই প্রবণতার কথা উল্লেখ করে পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা সান্ত্বনা রায় বলেন, ‘‘কারও অঙ্ক ভাল লাগে না, তো কারও ইতিহাস। কিন্তু সেরার তালিকায় থাকতে হলে সমস্ত বিষয়েই নম্বর বেশি পেতে হবে। পড়ুয়াদের আমরা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করি। উচ্চ মাধ্যমিকে সবাই পছন্দের বিষয় পেয়ে যাওয়ায় কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু মাধ্যমিকে সব বিষয়ে সমান মনোযোগ অনেক সময়েই দেওয়া হয় না। তাই সমস্যা হয়।’’
তা হলে কি শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন?
সান্ত্বনাদেবী জানান, কারও অঙ্ক ভাল না লাগলেও শিক্ষকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তাই বলে তাকে ৯০ পাওয়ার মতো করে তোলা মুশকিল। পাপিয়াদেবী জানান, এ ক্ষেত্রে স্কুলের পাশাপাশি, অভিভাবকদের সচেতনতাও জরুরি। একেই তো সিবিএসই এবং আইসিএসই-তে মেধা চলে যাচ্ছে। তার উপরে মাধ্যমিক স্তরে বিষয় বাছাই করে পড়াশোনা করলে শহরের পড়ুয়ারা কোনও দিন এগোতেই পারবেন না বলে মত শিক্ষা শিবিরের। তবে পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের নতুন সিলেবাসে এ নিয়ে মাত্র দু’বছর পরীক্ষা হল। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস পাঁচ বছরের পুরনো। একটু সময় যাক। মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ভাল হবে।’’ এর পাশাপাশি, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের স্কুলগুলিতে উন্নত মানের ল্যাবরেটরি থাকে। সেটাও একটি কারণ বলে মত শিক্ষা মহলের। অসিতবাবু তো মাধ্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ যা-ই হোক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শহরের পড়ুয়ারা ভাল ফল করায় শিক্ষকেরা খুশি। শুধু তারই মাঝে কাঁটার মতো আটকে আছে মাধ্যমিক স্তরের সমস্যাটা।