মনোবল বাড়াতে শহর শুনবে সমপ্রেমের গল্প

৩৭৭ ধারা বিদায়ের পরে এখনও পরিচয়-প্রেম-সম্মানের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যেতে হয় এমনই কত শত সমকামী-রূপান্তরকামীকে।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪০
Share:

এ বার এ শহরে বসছে ‘সমপ্রেমের গল্প বলার আসর’। প্রতীকী ছবি।

ছেলের সমকামী পরিচয় জানার পরে এ শহরেরই এক মায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল— ‘‘দাঁড়া, আগে এ নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নিই।’’ কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে এই পরিচয় এতটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন না তাঁদের মা-বাবা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজ। তাই তো সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৩৭৭ ধারা বিদায়ের পরে এখনও পরিচয়-প্রেম-সম্মানের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যেতে হয় এমনই কত শত সমকামী-রূপান্তরকামীকে। তাঁদের মনে আশার আলো দেখাতে এ বার এ শহরে বসছে ‘সমপ্রেমের গল্প বলার আসর’। যেখানে জীবনযুদ্ধে জিতে যাওয়া কিছু প্রান্তিকজনের কাহিনি শুনে উদ্বুদ্ধ হতে পারবেন অন্যেরা।

Advertisement

কেন এই উদ্যোগ? আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এ রাজ্যের যুগলেরা, তা সে সমপ্রেমী অথবা বিসমপ্রেমী যা-ই হন না কেন, অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন লড়াইয়ের সামনে পড়েছেন। তাঁদের সামনে আশার গল্প শুনিয়ে তাঁদের মনোবল আরও একটু বাড়িয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’ আর তাই যাঁদের গল্প কেউ বলে না, সেই প্রান্তিকদের জীবনের ওঠাপড়া, প্রেম-সংগ্রাম দিয়েই তৈরি হয়েছে এই আসরের চিত্রনাট্য।

আগামী ১৬ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী এই আসরের প্রথম দু’দিন শহরের এক প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে পরিচালক শ্রীধর রঙ্গনের নতুন সিনেমা ‘ইভনিং শ্যাডোস’— দক্ষিণ ভারতের এক গোঁড়া পরিবারে সমকামী যুবকের সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্কের টানাপড়েনের গল্প। আসরের তৃতীয় দিনে থাকছে আন্তর্জাতিক গল্পের আকর্ষণ। সেখানে অতিথিদের মুখোমুখি হয়ে নিজের জীবনের গল্প শোনাবেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তথা এক মার্কিন সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক চিকে ফ্রাঙ্কি এডোজ়িয়েন। সমকামী হওয়ার ‘অপরাধে’ যাঁকে এক সময়ে নিজের দেশ নাইজিরিয়া ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। জনপ্রিয় বই ‘দ্য লাইফ অব গ্রেট মেন: লিভিং অ্যান্ড লাভিং অ্যাজ় অ্যান আফ্রিকান গে ম্যান’-এর লেখক ফ্রাঙ্কি চলতি মাসে কলকাতায় পা রেখে গল্পে গল্পে বলবেন তাঁর মতো সমকামী আফ্রিকানদের কথা। তা শুনে এ শহরের প্রান্তিকজনেদের মনোবল অনেকটাই বাড়তে পারে বলে আশা আয়োজকদের।

Advertisement

তবে শুধু এলজিবিটি সম্প্রদায় নয়, আসরের দরজা খোলা সমাজের মূল স্রোতের মানুষদের জন্যেও। তাই নিছক গল্প বলার আসর নয়, এই উদ্যোগ শহরের প্রান্তজন ও মূল সমাজের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাবে বলেই মনে করছেন এটিএইচবি-র সদস্য ও ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিংহ। তিনি বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবনে কোনও সময়ে সমকামী-রূপান্তরকামীদের সংস্পর্শে এলেও তখন তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারেননি, এমন অনেকেই এই আসরে আসতে চাইছেন। বুঝে নিতে চাইছেন, কতটা কঠিন হয় এঁদের লড়াই। সচেতনতা তো এ ভাবেই বাড়ে!’’

তবে এক দিনেই সচেতনতা বাড়বে, সমাজের মানসিকতা বদলাবে, এমন দুরাশা করেন না সমকামী যুবক তোর্সো। সমকামী বলে স্কুলের বন্ধুদের কাছে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া এই কলেজছাত্র তবুও সঙ্গীর হাত ধরেই পৌঁছে যেতে চান এই আসরে। তাঁর কথায়, ‘‘এক-দু’বারে হবে না, বারবার শোনানো হলে হয়তো ভবিষ্যতে মূল স্রোতের মানুষের কাছে আমাদের গল্পগুলোও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এই আসরে সেই কাজটাই হতে চলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন